মফস্বলের মেয়ে মীম বিসিএস ক্যাডার

রুহিয়া (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: অনুসন্ধানবার্তা
“আমি মফস্বলের মেয়ে হতে পারি, কিন্তু আমার স্বপ্ন সীমান্ত মানে না।” এই বাক্যটি এখন শুধু একটি অনুভূতির নয়, বরং হয়ে উঠেছে বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।

ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ার মেয়ে আকতিয়া আয়মান মীম দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সরকারি চাকরি বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে দেখিয়েছেন স্বপ্ন, সংগ্রাম আর অধ্যবসায় মিললেই সাফল্য আসে।

এক বৃষ্টিভেজা রাতে রুহিয়ার ঘুমন্ত বাজারে হঠাৎ ভেসে ওঠা মোবাইল মেসেজ, “ভাইয়া, আমি বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।”

এই বার্তায় চোখ ভিজে ওঠে সাংবাদিক আপেল মাহমুদের। ছোট বোনের সাফল্যে ভেসে যায় এক পরিবারের আবেগ, আর পূর্ণ হয় এক প্রয়াত পিতার স্বপ্ন।

সদরের ঘণিমহেষপুর গ্রামের সাধারণ একটি ঘরে মীমের বেড়ে ওঠা। রুহিয়া মহিলা মাদরাসা থেকে এসএসসি ও গিন্নীদেবী আগরওয়াল মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি শেষে বাংলা সাহিত্য পড়তে ভর্তি হন ঢাকা সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু তার যাত্রা তখনই থেমে থাকেনি।

বাবা মরহুম মকবুল হোসেন ছিলেন রুহিয়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও আদর্শ সাংবাদিক। বাবার অকাল মৃত্যু মীমের জীবনে ধাক্কা হয়ে এলে তা রূপ নেয় প্রেরণায়।

ভাই দৈনিক নয়া দিগন্ত আপেল মাহমুদ বলেন, “মীমের জয় মানে বাবার স্বপ্নের বাস্তবায়ন। সে শুধু আমার বোন নয়, সে রুহিয়ার প্রতিটি মেয়ের সাহস।”

ভাবি স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাবেয়া সুলতানা বলেন, “মেয়েটার চোখে ছিল আগুন। সে সারারাত পড়াশোনা করত, কিন্তু কখনো ক্লান্তির ছাপ দেখিনি।”

মীম নিজেও জানায়, “আমি সুযোগ খুঁজিনি, রাহমানির রাহিম আল্লাহ তৈরি করে দিয়েছেন। এই জয় কেবল আমার পরিবারের নয়, আমার এলাকার প্রতিটি মেয়ের।”

তার মা রোখসানা হোসেন বলেন, “ওর বাবা বেঁচে থাকলে কত গর্ব করতেন! আজ আমি বিসিএস ক্যাডার মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হবো।”

রোখসানার অশ্রু শুধু আনন্দের নয়। তা একজন স্বপ্নবান পিতার স্মৃতির, একজন সাহসী ভাইয়ের সহযাত্রার এবং একজন মেয়ে-মানুষের বিজয়ের ভাষা।

আকতিয়া আয়মান মীম প্রমাণ করেছেন, জন্ম মফস্বলে হতে পারে, কিন্তু স্বপ্নের সীমা নির্ধারণ করে না ঠিকানা। এই জয় শুধু একটি নিয়োগের নয়; এটি এক প্রজন্মের, এক গ্রামের এবং হাজারো মফস্বলের মেয়ের জয়।