যশোরে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়

জেমস আব্দুর রহিম রানা, স্টাফ রিপোর্টার, যশোর: অনুসন্ধানবার্তা:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোরে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা বেড়েছে। জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে সদর ছাড়া বাকি পাঁচ আসনে একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এ কারণে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ছে এবং কিছু এলাকায় দলীয় কোন্দলের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

দলের ভেতরের বিভাজন রোধে বিএনপির হাইকমান্ড ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। বুধবার ঢাকায় যশোরের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। বৈঠকে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা পৌঁছে দেন, বিএনপিকে বিজয়ী করতে হলে ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ করে দলীয় ঐক্য বজায় রাখতে নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, যশোরের ছয়টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন অন্তত ২৩ জন। এর মধ্যে যশোর-৩ (সদর) আসনে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলের খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রয়াত মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। এই আসনে আর কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশী না থাকায় তিনি একমাত্র প্রার্থী বলে দলীয় সূত্রে জানাগেছে। এছাড়া অন্য পাঁচটি আসনে চলছে জমজমাট প্রতিদ্ব›িদ্বতা।

যশোর-১ (শার্শা) আসনে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন।

যশোর-২ (ঝিকরগাছা–চৌগাছা) আসনে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবিরা নাজমুল মুন্নী, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসহক ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান সামাদ নিপুণ।

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া –অভয়নগর– বসুন্দিয়া) আসনে রয়েছেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ।

যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহিদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার সেলিম অগ্নি এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ গফুর।

যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, উপজেলা সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাবেক পৌর মেয়র আবদুস সামাদ বিশ্বাস ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা নুরুজ্জামান তপন।

কেশবপুর আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী অমলেন্দু দাস অপু বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ খুবই পরিষ্কার— দলের ভেতরে কোনো কোন্দল রাখা যাবে না। মনোনয়ন না পেলেও দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। যশোর-২ আসনের প্রার্থী সাবিরা নাজমুল মুন্নী বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাই যার যার কৌশলে কাজ করছেন, তবে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হবেন একজনই। দলের স্বার্থে সবাই ঐ প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবেন। যশোর-৪ আসনের ব্যারিস্টার নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ বলেন, দলের বার্তা হলো— ব্যক্তিস্বার্থ নয়, দলীয় স্বার্থই আগে।

যশোরে বিএনপির মনোনয়ন দৌড় স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। তবে একাধিক প্রার্থীর প্রতিদ্ব›িদ্বতা ও অভ্যন্তরীন প্রতিযোগিতা সংগঠনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখা যাক, হাইকমান্ডের ঐক্যের বার্তা মাঠে কতটা কার্যকর হয় এবং কে পান কাঙ্খিত ‘ধানের শীষ’ এর টিকিট।