নিজস্ব প্রতিবেদক, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতির মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং ভূয়া নম্বর প্লেট ব্যবহার করে মাইক্রোবাস চালানোর ঘটনায় বগুড়া সদর থানার এসআই গোলাম রসুলকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সেইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম (সেবা)। ইতিমধ্যে ওই এসআইয়ের মাইক্রেবাসটি পুলিশ জব্দ করেছে।
ক্লোজড হওয়া পুলিশের এসআই গোলাম রসুল প্রায় ২ মাস আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বগুড়া সদর থানায় এসে যোগ দেন।
জানা গেছে, বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলম নয়ন রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া প্রেসক্লাবের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে চকযাদু রোডে দৈনিক করতোয়া অফিসের সামনে তিনি যানজটে আটকা পড়েন।
এসময় দেখতে পান সামনে রাস্তার ওপরে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে সামনে গিয়ে গাড়ি চালককে মাইক্রোবাসটি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বলেন।
এতে চালকের আসনে থাকা সাদা পোশাকের ব্যক্তি এসআই গোলাম রসুল ক্ষিপ্ত হয়ে মাইক্রোবাসের ভেতর থেকেই প্রেসক্লাবের সভাপতির মোটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান।
এতে ব্যর্থ হয়ে ওই ব্যক্তি ফিল্মি স্টাইলে মাইক্রোবাসের দরজা লাথি দিয়ে খুলে নেমে গিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনার প্রেসক্লাব সভাপতিসহ পথচারিরা হতভম্ব হয়ে যান।
এসময় তিনি নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে গাড়ি সরিয়ে নিতে বলার কারণে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখতে চান। পরিস্থিতির বিষয়টি প্রেসক্লাব সভাপতি তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরীকে অবহিত করলে ওই ব্যক্তি চাবি ফিরিয়ে দিয়ে চলে যান।
বিষয়টি বগুড়ায় কর্মরত সংবাদ কর্মিরা জানার পর পরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সাংবাদিক মহল। তারা এঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করে পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরবর্তীতে কয়েকজন সংবাদ কর্মী ওই পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের নম্বর (ঢাকা-মেট্রো-চ-৭১-৩২৭৩) বিষয়ে বিআরটিএ-তে গিয়ে সন্ধান করেন। বিআরটিএ’র দফতর থেকে জানানো হয়, তাদের অনলাইন সার্ভারে এ নাম্বারের গাড়ির কোনতথ্য নেই। কারণ ‘চ-৭১’ সিরিয়ালের কোন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বিআরটিএ-তে হয়নি।
যদিও বগুড়ার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন চ সিরিয়ালের গাড়ি সাধারণত অ্যাম্বুলেন্সে ব্যবহৃত হয়, তবে ওই নম্বরটি আদৌ সঠিক কি-না তা যাচাই করতে গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।
এঘটনাটি বগুড়া পুলিশ সুপার জানতে পেরে তাৎক্ষণিক গোলাম রসুল নামে ওই এসআইকে বগুড়া পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেন।
সেইসঙ্গে ওই পুলিশ সদস্যের এমন আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরির নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার।
কমিটি আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে পুলিশ সুপার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দদের জানান।
এদিকে এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বগুড়া প্রেসক্লাব ও বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিইউজে) পৃথক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে পুলিশ পরিচয়ে এমন আচরণ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে বলা হয়।
এমন ঘটনার যথাযথ বিচার না হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের যে সম্পর্ক তার অবণতি হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুলিশের ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন সাংবাদিক নেতারা।
বিবৃতিদাতারা হলেন, বগুড়া প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আব্দুস সালাম বাবু, আব্দুল মোত্তালিব মানিক, এসএম কাওছার, সাধারণ সম্পাদক আরিফ রেহমান, যুগ্ম সম্পাদক সাজেদুর রহমান সিজু, সাজ্জাদ হোসেন পল্লবসহ নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন নির্বাহী পরিষদের সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য্য শংকর, এএইচএম আকতরুজ্জামান, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আমজাদ হোসেন মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক জেএম রউফ প্রমূখ।