বগুড়ায় জোড়া খুনের ঘটনায় তিনজন গ্রেফতার

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা
বগুড়ার বিসিক এলাকায় চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় ৭২ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার রড, খুন হওয়া ব্যক্তির ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোনসহ মোট ২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার উদ্ধার করা হয়।

রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী (বিপিএম-সেবা) এক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী

এঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলো- বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানাধীন চকলোকমান এলাকার মৃত মিসবাহুল মিল্লাত নান্নার ছেলে হোসাইন বিন মিল্লাত ওরফে নিনজা (৩৪), একই এলাকার সায়েদ হামান ব্যাপারীর ছেলে সুমন ব্যাপারী (২৭) এবং বগুড়া সদর থানাধীন নারুলী তালপট্টি এলাকার বদিউজ্জামান প্রামানিকের ছেলে রাহাত (২১)।

জানাগেছে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৩টার দিকে বগুড়া জেলা সদরে ফুলবাড়ী বিসিক এলাকার একটি পানির ট্যাঙ্কির ভিতর থেকে মাছু মেটাল ইন্ডাষ্ট্রির নাইট গার্ড হান্নান এবং শামসুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর (বিপিএম-সেবা) সার্বিক দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী (বিপিএম) এর তত্তাবধানে বগুড়া’র ইনচার্জ মোঃ সাইহান ওলিউল্লাহ এর নেতৃত্বে বগুড়া ডিবির একটি দল হত্যাকারীদের গ্রেফতারের জন্য মাঠে নামেন।

একপর্যায়ে ২৬ ফেব্রুয়ারী গাজীপুর জেলাসহ বগুড়া জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত তিনজন আসামীকে গ্রেফতার করেন। এসময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার রড, খুন হওয়া ব্যক্তির ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোনসহ মোট ২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার উদ্ধার করা হয়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী (বিপিএম-সেবা) জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী মাছু মেটালের সাবেক কর্মচারী সুমন ব্যাপারী জানায় যে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারী (বুধবার) রাত ৯টার দিকে বগুড়া সদরে খোকন পার্কে বসে সুমন ব্যাপারী ও মাছু মেটালের পিক আপের ড্রাইভার হোসাইন বিন মিল্লাত ওরফে নিনজা এবং নিনজার হেলপার রাহাত সহ তারা আড্ডা দিচ্ছিল।

এমন সময় আসামী সুমন তার আর্থিক দূর্দশার কথা তাদের জানায় এবং আসামী সুমন হোসাইন বিন মিল্লাত ওরফে নিনজার কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চায়। টাকা না দিয়ে হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা তাদেরকে বলে যে, একটা কাজ করতে হবে, তাহলে এক কাজেই ২ লাখ টাকা পাবে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, কাজের বিষয়ে সুমন জানতে চাইলে তাহারা বলে যে, ভোরে ফজরের নামাযের পর তুই বিসিক মাছু মেটালে চলে আয়। তখন আসামী সুমন ব্যপারী বলে যে, আমি মাছু মেটালে ঢুকবো কিভাবে সিকিউরিটি গার্ডরা আমাকে ঢুকতে দিবে না। আমি তো এখন আর মাছু মেটালে কাজ করি না। তখন হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা তাকে বলে সকালে তার মাল ডেলিভারি আছে। মাছু মেটালের ভিতরে ঢোকার ব্যবস্থা সেই করে দিবে।

সেই পূর্ব পারিকল্পনা মোতাবেক গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ওই স্থানে আসামী সুমন, হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা ও রাহাত সহ আরো দুইজন সহযোগীসহ একত্রিত হয়ে তারা মাছু মেটালের ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর প্রথমে নাইট গার্ড হান্নানকে কৌশলে পানির হাউজের দিকে নিয়ে লোহার রড দিয়ে মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করে মৃত্য নিশ্চিত করে পানির হাউজের ভিতরে ফেলে দেয়।

এরপর অপর নাইট গার্ড শামসুলকে ঘুম থেকে ডেকে কৌশলে একই জায়গায় নিয়ে তাকেও লোহার রড দিয়ে মাথার পিছনে সজোরে আঘাত করে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যা নিশ্চিত করে একই হাউজে ফেলে দেয়।

অতঃপর আসামী হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা নিহত হান্নানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সিমকার্ডসহ আসামী সুমনকে প্রদান করে এবং বলে তুই গাজীপুর চলে যা এবং সেখান থেকে নিহত হান্নানের সিমকার্ড ব্যবহার করে মুক্তিপন বাবদ ৫ লাখ টাকা দাবি করতে থাক বগুড়া আমি সামলাচ্ছি। এভাবে তারা হত্যা করে অপহরণের নাটক সাজায়। তার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত আসামী সুমন গাজীপুর পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে নিহত হান্নানের ব্যবহৃত মোবইল সিম ব্যবহার করে সু-কৌশলে টাকা দাবি করতে শুরু করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, দীর্ঘদিন যাবত মাছু মেটালের ড্রাইভার হোসাইন বিন মিল্লাত ওরফে নিনজা মাছু মেটাল থেকে বিভিন্ন সময়ে মালামাল চুরি করে বাহিরে বিক্রি করে আসছিল। এই বিষয় নিয়ে নাইট গার্ডদের সাথে বনিবনায় সমস্যা হওয়ায় নাইট গার্ডরা বিষয়টি মালিক পক্ষকে জানিয়ে দিবে বলে নিনজাকে বলে। তখন নিনজার চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে যাওয়ার আশংকায় নিনজা তার সহযোগীদের সহযোগিতায় নাইট গার্ড হান্নান ও শামসুলকে হত্যা করে এই অপহরণের নাটক সাজায়।

বগুড়া ডিবির ইনচার্জ মোঃ সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, এই জোড়া খুনের বিষয়ে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসমীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বগুড়ার বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।