স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ার ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকনের বাসভবনে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা জাহানকে শ্লীলতাহানী করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এঘটনায় বুধবার (০৯ জুন) বিকেলে আওয়ামীলীগ নেত্রী সুলতানা জাহান বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম ও ধুনট উপজেলা আ‘লীগের ত্রান বিষয়ক সম্পাদক কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগসূত্রে জানাগেছে, ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের স্ত্রী সুলতানা জাহান দীর্ঘদিন ধরে ধুনট উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সুবাদে ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকনের সঙ্গে আওয়ামীলীগ নেত্রী সুলতানা জাহানের রাজনৈতিক সখ্যতা গড়ে ওঠে।
এই সংখ্যতার জের ধরে আব্দুল হাই খোকন গত দুই বছর আগে সুলতানা জাহানের কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার নেন। কিন্তু এক মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও আব্দুল হাই খোকন দীর্ঘদিনেও তাকে কোন টাকা ফেরত দেননি। এতে সুলতানা জাহান বিষয়টি নিয়ে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের অবগত করলে আব্দুল হাই খোকন তাকে টাকা ফেরত নিয়ে যেতে ৯ জুন (বুধবার) তার ধুনট সরকারি বাসভবনে আসতে বলেন।
সুলতানা জাহান অভিযোগ করেন বলেন, আব্দুল হাই খোকনের কাছ থেকে পাওনা টাকা নিতে তার বাসভবনে গেলে আওয়ামীলীগ নেতা কামরুল ও খোকনের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা আমাকে টেনে হেঁচরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং আমাকে শ্লীলতাহানী করে। পরে আমার চিৎকারে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উদ্ধার করেন। এঘটনায় তাদের দুইজনকে আসামী করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
তবে এবিষয়ে আব্দুল হাই খোকন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সুলতানাকে কোন শ্লীলতাহানী করা হয়নি। উল্টো সুলতানাই আমার বাসায় ঢুকে অশালীন ভাষায় গালাগালি করেছে। রাজনৈতিক ভাবে আমাকে হেয়পতিপন্য করতে প্রতিপক্ষরা মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
এবিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা জানান, আওয়ামীলীগ নেত্রীর অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করতে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকনের বিরুদ্ধে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি, শ্রমিক নিয়োগ, জলমহাল, বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি প্রকল্প বিক্রিসহ তদবির বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার এসব অভিযোগগুলো দীর্ঘদিনের।
নিয়োগ পাওয়ার আশায় সর্বস্ব বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা করে আব্দুল হাই খোকনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন চাকরি প্রার্থী মথুরাপুর ইউনিয়ের আবু বক্কার, গোপালনগরের আব্দুল হাই, ঝিনাই গ্রামের একরাম সরকার, চিকাশী আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম ও গোলাম মোর্শেদ বুলবুল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও টাকা ফোরত না পেয়ে লাঞ্চিতও হয়েছে তাদের।
এসব বিষয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ চাকরি প্রার্থী আবু বক্কার, আব্দুল হাই, একরাম সরকার, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম ও গোলাম মোর্শেদ বুলবুল বাদী হয়ে ধুনট উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকন ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় পৃথক পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। কিন্তু অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভুক্তভোগিদের এসব অভিযোগ আমলে নেয়নি ধুনট থানা পুলিশ। সেই সময় ভুক্তভোগির অভিযোগের ভিত্তিতে আব্দুল হাই খোকনের নিয়োগ বানিজ্য ও দূর্নীতি নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক ইমরান হোসেন ইমন পত্রিকায় কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
এতে ওই সাংবাদিকের উপরও ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন আব্দুল হাই খোকন। গত ৩০ মার্চ রাতে পেশাগত কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে চলন্ত মোটরসাইকেলের উপর পিছন থেকে হামলা চালিয়ে সাংবাদিক ইমনের বাম হাত ভেঙ্গেও দেয় খোকন বাহিনী। এঘটনায় গত ৬ এপ্রিল ওই সাংবাদিক বাদী হয়ে খোকনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় মামলাও দায়ের করেন। কিন্তু এবারও পুলিশ ক্ষমতাসীনদের পক্ষে অবস্থান নেয়। তাই প্রশাসনের সহযোগিতাতেই এভাবেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে খোকন বাহিনী।
এবিষয়ে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান মহসীন আলম বলেন, অল্প সময়ে রাজনীতিতে উঠে আসায় বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন আব্দুল হাই খোকন। তার বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে।