ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনট উপজেলার যমুনা নদীতে দিনভর অভিযান চালিয়ে ১৬ জন বালু দস্যুকে গ্রেপ্তার করে ১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার দিনভর যমুনায় অভিযান শেষে বিকাল ৫টার দিকে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এই রায় ঘোষণা করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত।
দণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলো- ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী গ্রামের বাদশা মিয়া ছেলে সৈকত (৩৫), শহড়াবাড়ি গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে আইয়ুব আলী (২০), চুনিয়াপাড়া গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে রাজু (১৯), বড়ইতলী গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে স্বপন (৩৬), বৈশাখী চরের আবু কাশেমের ছেলে রাঙ্গা (২৫), আব্দুস সালামের ছেলে রহিম (২০), সালাম আকন্দের ছেলে হারুন (২৫), পূর্ব গুয়াডহরি গ্রামের আমজাদ মন্ডলের ছেলে সোহেল (২০), মৃত ভুলু সরকারের ছেলে হবি (৪০), শিমুলবাড়ী গ্রামের মৃত শাহ আলীর ছেলে রবিউল (৩৫), কৈয়াগাড়ি গ্রামের মৃত অছিম উদ্দিনের ছেলে শহিদুল (৫০), শিমুলবাড়ী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে আলমগীর (২৪), শহড়াবাড়ি গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে রাসেল মিয়া (২২). তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে বুলবুল (২৮), আয়নাল হকের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩০) ও পাবনা জেলার সাথিয়া উপজেলার বাবুপাড়া এলাকার কুদ্দুস মিয়ার ছেলে বাবলু মিয়া (৫০)।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে যমুনা নদী। নদীর পূর্বপাড়ে বৈশাখী ও রাধানগর চর। আর যমুনার পশ্চিম পাড়ে ভাঙ্গন রক্ষায় সরকারি অর্থায়নে নির্মিত তীর সংরক্ষণ প্রকল্প ও বাঁধ। কিন্তু দীর্ঘ বছর ধরেই যমুনা নদীর এই এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র।
অব্যাহত বালু উত্তোলনের কারনে ধুনট উপজেলার দুটি চরাঞ্চল যেমন বিলীন হওয়ার পথে তেমনি সরকারের হাজারো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তীর সংরক্ষন প্রকল্প ও বাঁধ এখন হুমকির মুখে পড়েছে। তবে প্রশাসন মাঝে মধ্যেই অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালু উত্তালনকারীদের গ্রেপ্তার করে জেল-জরিমানা করলেও পরবর্তীতে আবারও ওই চক্রটি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন নৌ পথে বিক্রি করে আসছে।
ভিডিওটি দেখুন– অনুসন্ধানবার্তা ইউটিউব চ্যানেলটি সাবক্রাইব করুন-
এদিকে নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসাবে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের যমুনা নদীতে আবারো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রট ও ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরুল আমিন।
এদিকে আটককৃত বালু দস্যুরা জানান, শহড়াবাড়ী ঘাটের ইজারাদার হযরত আলীকে ম্যানেজ করেই যমুনার ঘাটে ড্রেজার মেশিন রেখে সুবিধাজনক সময়ে বালু উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও চাঁদা আদায়ের দায়িত্বে থাকেন জহুরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, রফিক শাহ্, রবি শাহ ও মাহমুদুল সহ আরো কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
আরো পড়ুন- ধুনটে ৫ ভূমি দস্যুর ১৫ দিনের কারাদণ্ড
তবে স্থানীয় লোকজন এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে অবৈধ নৌ ড্রেজার মেশিনগুলো ধ্বংসের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলায় শতাধিক নৌ চালিত ড্রেজার মেশিনগুলো যমুনার তীরে বেধে রাখা হয়। আর রাতে চলে অবৈধ বালু উত্তোলনের ধ্বংসজজ্ঞ। আর একারনেই ধুনটের দুটি চরাঞ্চল এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই অবৈধ বালু উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হলে ড্রেজার মেশিনগুলো ধ্বংসের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রট ও ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসাবে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ১ মাস করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত ৫টি নৌ ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়েছে। পরবর্তীতে এই মেশিনগুলো ৫ লাখ টাকা করে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।
তিনি আরো জানান, এই অবৈধ ড্রেজার মেশিনগুলো ধুনট থানা পুলিশের হেফাজতে রাখতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া যমুনার কোন ঘাটে যেন এই অবৈধ ড্রেজার মেশিনগুলো রাখতে না পারে এজন্য পরবর্তীতে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।