স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ার শেরপুরের কচুয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে তরিঘরি করে নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ।
বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে। তাই করোনার ছুটি উপেক্ষা করে তরিঘরি করে বিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী, পরিছন্নতাকর্মী ও অফিস সহায়ক পদে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৪ জুলাই নিরাপত্তাকর্মী, পরিছন্নতাকর্মী ও অফিস সহায়ক সহ তিনটি সৃষ্ট পদের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশালপুর ইউনিয়নের কচুয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সচিব ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ।
তিনটি পদের বিপরীতে অন্তত ২৪ জন চাকুরী প্রত্যাশী আবেদন করেন। যাচাইবাছাই করে ২০ জনকে চাকুরী’র লিখিত পরিক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত করে ২১ আগস্ট লিখিত ও মৌখিক পরিক্ষার দিনক্ষন নির্ধারণ করেন নিয়োগ কমিটি। এর পাশাপাশি চাকুরী প্রত্যাশীদের সাথে দরদাম শুরু করেন এই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বিশালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম আহম্মেদ ও তার লোকজন।
এক পর্যায়ে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দিতে কমিটির সভাপতি শামিম আহম্মেদের ভাগ্নে একই ইউনিয়নের সিংড়াপাড়া গ্রামের মো. রঞ্জু মিয়াকে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার চুক্তি হয়।
একইভাবে নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগ দিতে নিয়োগ কমিটির সভাপতি শামিম আহম্মেদের চাচাতো ভাই কচুয়াপাড়া গ্রামের মো. কাওসার আহম্মেদকে নিয়োগ দিতে আশস্ত করা হয়।
পরিছন্নতাকর্মী পদেও নিয়োগ পাইয়ে দিতে নির্ধারিত তারিখের পূর্বেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব।
এদিকে অর্থনৈতিক লেনদেনের খবর ফাঁস হওয়ার ফলে চাকুরী প্রত্যাশীরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীদের সাথে ভারাটিয়া পরীক্ষার্থী দিয়ে গত ২১ আগষ্ট লোক দেখানো একটি লিখিত ও মৌখিক নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহন করে।
এব্যাপারে অফিস সহায়ক পদে চাকুরী প্রত্যাশী মেহেদী হাসানের পিতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার ছেলেকে চাকুরী দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদ্যালয় ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তার লোক দিয়ে অগ্রিম টাকা গ্রহন করেন। নিয়োগ পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে শুনলাম অফিস সহায়ক পদে অধিক টাকার বিনিময়ে অন্য একজনকে নিয়োগ দেয়ার চুক্তি হয়েছে। তবে তারা আমার টাকা ফেরৎ দিয়েছেন।
এব্যাপারে কথা হয় অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাওয়া মো. রঞ্জু মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, নিয়োগপত্র হাতে না পেলেও আগামী মাসে তিনি কাজে যোগ দিবেন। রঞ্জু মিয়া আরো জানান, সভাপতির সাথে টাকা লেনদেন করেছেন তার পিতা আব্দুল লতিফ। এখন পযর্ন্ত পাঁচলাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে রঞ্জু নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় নিরাপত্তাকর্মী পদে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া কাওসার আহম্মেদের সঙ্গেও। কাওসার দাবী করে বলেন, সভাপতি শামিম আহম্মেদ তার চাচাতো ভাই হওয়ায় তিনি নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কচুয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য সম্পন্ন নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন বক্তব্য দিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
তবে সভাপতি শামিম আহম্মেদ বলেন, বিধি মোতাবেক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে নিয়োগের বিনিময়ে কোন প্রকার অর্থ গ্রহন করা হয়নি বলে তিনি দাবী করেন।
এবিষয়ে শেরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, কেউ বলছে ২০ লাখ কেউ বলছে ৩৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। তবে আমি এর কিছুই জানিনা।