ধুনটে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে তুলকালাম কান্ড !
সোমবার হুকুমআলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ধুনট সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ব্যানারে রাজাকার পুত্র মাসুদ রানাকে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক মনোনীন করা এবং সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।-অনুসন্ধানবার্তা

স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ার ধুনট উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে একের পর এক তুলকালাম কান্ড ঘটে চলেছে।

সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে আবারও এই উপজেলায় দলীয় কোন্দন শুরু হয়েছে। দল থেকে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের অব্যাহতি, অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন বাণিজ্য, রাজাকার পুত্রকে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক মনোনীন করা এবং মনোনয়ন দেয়ার ষড়যন্ত্র সহ বিভিন্ন অভিযোগে রীতিমতো মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা করছে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।

সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে ধুনট হুকুমআলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ধুনট সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ব্যানারে রাজাকার পুত্র মাসুদ রানাকে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক মনোনীন করা এবং সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।
অর্থের বিনিময়ে ১০ ইউপিতে মনোনয়ন বানিজ্যের অভিযোগ।। রাজাকার পুত্রকে  আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

এই কর্মসূচিতে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গোলাম সোবাহান, দপ্তর সম্পাদক আফসার আলী, প্রচার সম্পাদক মহসীন আলম মিন্টু, সদস্য শামীম হোসেন, সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মন্টু, ধুনট উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া খন্দকার সহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে ধুনট সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মন্টু বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। কেন্দ্রের নিদের্শনা অনুযায়ি ৯টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওমীলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভার মাধ্যমে ১০ জনের নামের তালিকা ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে প্রেরন করা হয়।

কিন্তু ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুন্নবী তারিক ও সাধারণ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকন তৃনমূল নেতাকর্মীদের মতমতকে উপেক্ষা করে ধুনট উপজেলার গেজেটভুক্ত ৪৮নং রাজাকার ইদ্রিস আলীর ছেলে মাসুদ রানাকে গঠনতন্ত্র পরিপন্থীভাবে আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক বানিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। তৃনমুল নেতাকর্মীরা এসব দলীয় মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গোলাম সোবাহান বলেন, শুধু ধুনট সদর ইউনিয়নই নয়, ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। যাদের এই মনোনয়ন বানিজ্যের কারণে এলাঙ্গী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগে ১০ বছর সভাপতির দায়িত্বে থাকা ২ বারের ইউপি চেয়ারম্যান এমএ তারেক হেলালকে মিথ্যা অযুহাতে দল থেকে অব্যাহিত প্রদান করেন।

তিনি আরো বলেন, ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘরে বসেই যাকে তাকে মনোনয়ন দিচ্ছেন। এলাঙ্গী ইউনিয়নে হেলালকে সরিয়ে দিয়ে তুজাম নামে এক জুয়াড়ির নাম কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন। যাতে এলাঙ্গী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের ভরাডুবি হয়। আর এজন্য তারা বিএনপির সমর্থক আরেক প্রার্থী সম্রাট নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্গের টাকাও নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

দলীয়সূত্রে জানাগেছে, গত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান টিআইএম নূরুন্নবী তারিক। কিন্তু তিনি আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ২ বারের মেয়র এজিএম বাদশাহ্র কাছে পরাজিত হন।

এরপর থেকেই স্থানীয় এমপি হাবিবর রহমানের সঙ্গে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি টিআইএম নূরুন্নবী তারিক ও সাধারণ সম্পাদক ধুনট উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর থেকেই ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে এই দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব এখন তুঙ্গে উঠেছে।

তবে এব্যাপারে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি টিআইএম নূরুন্নবী তারিক বলেন, আজকে যারা মানবন্ধন করেছে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাদের ভোটেই মাসুদ রানা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এরপর থেকেই মাসুদ রানা এমপি হাবিবর রহমানের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু তখন কেন প্রশ্ন উঠলো না সে রাজাকার পুত্র। তবে এখন মাসুদ রানা স্বচ্ছ রাজনীতি করায় তাকে রাজাকার পুত্র বানানো হচ্ছে।

তবে এব্যাপারে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের আওয়ামীলীগের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবর রহমান বলেন, ২০১৬ সালে মাসুদ রানার বাবা ইদ্রিস আলীর নাম গেজেটভুক্ত হয়। তবে এর আগেই মাসুদ রানাকে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সুপারীশে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। তাই আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কখনোই চাইব না যে, রাজাকার পুত্রকে দলীয় পদ পদবী বা আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে।

তিনি আরো বলেন, আমি আওয়ামীলীগের মনোনীত একজন সংসদ সদস্য হলেও আমার সঙ্গে বা দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কোন প্রকার পরামর্শ না করেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ইচ্ছে কাজ করে যাচ্ছেন।