ধুনটে জুয়াড়ি হিটলুকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আ’লীগ নেতাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনুসন্ধানবার্তা, ধুনট:
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় জুয়া ও মাদকের টাকা ভাগবাটোয়াকে কেন্দ্র করে ৮টি মামলার আসামী কুখ্যাত জুয়াড়ি আরিফুল ইসলাম হিটলুকে (৪০) হত্যার ঘটনায় এক আওয়ামীলীগ নেতাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) নিহত হিটলুর স্ত্রী শেফালী খাতুন বাদী হয়ে নিমগাছী ইউনিয়নের বেড়েরবাড়ি গ্রামের মৃত আবুল মন্ডলের ছেলে নিমগাছী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক (সদ্য বহিস্কৃত) একাধিক মামলার আসামী নবাব আলীসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নিহত আরিফুল ইসলাম হিটলু ধুনট উপজেলার বেড়েরবাড়ী গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে।

এরআগে গত শনিবার (১৬ এপ্রিল) রাতে ধুনট উপজেলার বেড়েরবাড়ী বিদ্যালয় চত্বরে আরিফুল ইসলাম হিটলুকে কুপিয়ে হত্যার পর তার মরদেহ নিয়ে চলে যায় প্রতিপক্ষরা। ওই রাতে ধুনট থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা অনেক খোঁজাখুজি করেও তার কোন সন্ধায় পায় না।

পরদিন রবিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে ধুনট উপজেলার পাশ^বর্ত্তী শাজাহানপুর উপজেলার ক্ষুদ্রফুলকোট উত্তরপাড়া গ্রামের বটতলা কবরস্থানের একটি পুরাতন কবর থেকে হিটলুর মরদেহ উদ্ধার করে ধুনট থানা পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয়সূত্রে জানাগেছে, দীর্ঘ বছর ধরে বগুড়ার ধুনট ও শাজাহানপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামে জুয়ার আসর চালিয়ে আসছিলো বেড়েরবাড়ি গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে আরিফুর ইসলাম হিটলু। শনিবার সন্ধ্যায় শাজাহানপুর উপজেলার খালপার বিজ্রের উত্তরপাশে আবারো জুয়ার আসর বসায় হিটলু। জুয়ার আসরের পাশেই মাদক সেবন করছিলো সে। এসময় মাদক ও জুয়ার টাকা নিয়ে সহযোগি আব্দুল মালেকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে হিটলু। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বগুড়ার একটি হাসপাতালে প্রেরন করে। আহত আব্দুল মালেক ধুনট উপজেলার বেড়েরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনার পর হিটলু ওই স্থান ত্যাগ করে ধুনট উপজেলার বেড়েরবাড়ী বিদ্যালয়ে চত্বরে পৌঁছালে প্রতিপক্ষরা হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ নিয়ে চলে যায়। এঘটনায় হিটলুর স্ত্রী শেফালী খাতুন বাদী হয়ে নিমগাছী ইউনিয়নের বেড়েরবাড়ি গ্রামের মৃত আবুল মন্ডলের ছেলে নিমগাছী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক (সদ্য বহিস্কৃত) নবাব আলী এবং হিটলুর সহযোগি আব্দুল মালেকসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

তবে হিটলু হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১নং আসামী আ’লীগ নেতা নবাব আলীর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়েরকৃত সরকারি চাল চুরির ১টি মামলা, অপহণের ১টি, মাদকের ১টি ও মারামারি ৩টি মামলা রয়েছে।

ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা জানান, হিটলুর বিরুদ্ধে ধুনট থানাসহ বিভিন্ন থানায় জুয়া, মাদক, মারমারি ও পুলিশের ওপর হামলার মামলা সহ ৮টিরও অধিক মামলা মামলা আছে। এছাড়াও গ্রামের সাধারণ মানুষদের হয়রানী সহ ভয়ভীতি দেখাতো। তাকে একাধিকবার গ্রেফতার করা হলেও জামিনে বের হয়ে এসে সে আবারো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানাগেছে জুয়া ও মাদকের টাকা ভাগবাটোয়া নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। একপর্য়ায়ে জুয়াড়ি হিটলুকে কুপিয়ে হত্যা করে তার লাশ নিয়ে চলে যায় প্রতিপক্ষরা। এঘটনায় নিহত হিটলুর স্ত্রী বাদী হয়ে ২০ জনকে আসামী করে ধুনট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। তবে এই হত্যা মামলার ১নং আসামীর বিরুদ্ধে ধুনট থানায় আরো ৬টি মামলা রয়েছে। দ্রুত আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।