ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শহড়াবাড়ি ঘাট এলাকার যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ৪ জনকে আটক করেছে নৌ পুলিশ। এসময় বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিন (বাল্কহেড) জব্দ করে পুলিশ।
শনিবার বিকালে বাংলাদেশ নৌ পুলিশের টাঙ্গাইল অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ইসমাইল মিঞা ও সিরাজগঞ্জ সদর নৌ থানার ওসি দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে আটককৃতরা হলো- ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শহড়াবাড়ী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে আলিফ (২০), একই গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে একরাম (২০), হেলাল মন্ডলের ছেলে লিমন মিয়া (২০) ও শফি মন্ডলের ছেলে সবুজ মন্ডল (২৫)।
জানাগেছে, গত বছরের ২ অক্টোবর বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের চৈবের মৌজার ৩৬.৯৩ একর সরকারি খাস জমি ৬ মাসের জন্য বালু মহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়। ধুনট উপজেলা যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন ওই বালু মহালের ইজারাদার হিসাবে নিযুক্ত হন।
কিন্তু বর্তমানে ইজারকৃত বালু মহালের নির্ধারিত স্থানে চর জেগে ওঠায় ইজারাদার বেলাল হোসেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পসহ আশপাশের ব্যক্তি মালিকানা ফসলী জমির পাশে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে।
এদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাত্র ১৫০ মিটার দূরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারনে ২০০২ সালে নদী ভাঙ্গন রক্ষায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বানিয়াজান স্পার এবং ২০১৬ সালে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদীর ডান তীর সংরক্ষন প্রকল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
বালু উত্তোলনের ইজারাদার বেলাল হোসেন ও সাব ইজারাদার মাহমুদুলসহ তাদের লোকজনের যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলনের কারনে সরকারি কোটি টাকার সম্পদ যেভাবে হুমকির মুখে পড়েছে, তেমনি নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষদের বসতভিটা ও ফসলী জমি ফের ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।
নিয়ম না মেনে ইজারাদার বেলাল হোসেন ও তার সহযোগি মাহমুদুল প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ২০টির মতো লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিনে অব্যাহত বালু উত্তোলন করায় সরকারের শত কোটি টাকার প্রকল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। এসব বিষয়ে সম্প্রতি কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে নৌ পুলিশ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি গোচর হয়।
এবিষয়ে বাংলাদেশ নৌ পুলিশের টাঙ্গাইল অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ইসমাইল মিঞা বলেন, সংবাদ পেয়ে ধুনটের যমুনা নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, যেখানে বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়েছে, সেখান থেকে কোন বালু উত্তোলন করা হচ্ছে না। তারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশেই ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিল। একারনে ওই স্থান থেকে ৪ জনকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে এবং বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত একটি লঞ্চ চালিত ড্রেজার মেশিনও জব্দ করা হয়েছে। বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ধুনট থানায় মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান তিনি।