ধুনটে ইউনিয়ন আ’লীগের সম্পাদক কারাগারে

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মর্তুজা (৪৮) মাদক মামলায় দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে কারাবরণ করায় ১নং যুগ্ন সম্পাদক আব্দুল মান্নান সরকারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) বিকালে মথুরাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গঠনতন্ত্র অনুযায়ি তাকে এই দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তবে মাদক মামলায় সাজা হওয়ার ১৬দিন পর ঘটনাটি জানাজানি হলে এই পদে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে আব্দুল মান্নান সরকারকে দায়িত্ব প্রদান করা হলেও গোলাম মর্তুজাকে এখনও স্থায়ীভাবে বহিস্কার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মীরা।

জানাগেছে, ২০০৮ সালে এসআই পরিবহনের সুপারভাইজার পদে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে গোলাম মর্তুজার বিরুদ্ধে সেই বছরের ১২ জুলাই ৮০ বোতল ফেন্সিডিল পাচারের ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। এই মামলায় শুনানী শেষে দীর্ঘ ১৫ বছর পর চলতি বছরের ১৯ জুন গোলাম মর্তুজাকে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন জয়পুরহাট জেলা আদালত। এছাড়া এই মামলায় তাকে ৪ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো ১ মাসের বিনাশ্রম করাদণ্ড প্রদান করা হয়। গোলাম মর্তুজা বর্তমানে জয়পুরহাট জেলা কারাগারে রয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম মর্তুজা বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের পীরহাটি গ্রামের মাওলা বক্স মোল্লার ছেলে।

এদিকে গত ১৯ জুন মাদক মামলায় রায় ঘোষণার পর আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম মর্তুজাকে কারাগারে পাঠানো হলেও সম্প্রতি এই ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠে। এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ায় ১৬ দিন পর আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ি ১নং যুগ্ন সম্পাদক আব্দুল মান্নান সরকারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। কিন্তু এখনও সাজাপ্রাপ্ত মাদক ব্যবসায়ী আ’লীগ নেতা গোলাম মর্তুজাকে বহিস্কার করা হয়নি। একারনে তৃণমুল ত্যাগি নেতাকর্র্মীরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রীয়া ব্যক্ত করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মথুরাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে কেন দল থেকে বহিস্কার হচ্ছে না। আর কিভাবেই বা একজন মাদক ব্যবসায়ী আওয়ামীলীগের মতো একটি বৃহৎ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদবী পায়, এটাও তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তৃণমুল নেতাকর্র্মীদের।

তবে এবিষয়ে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল সনি বলেন, ২০১০ সালের দিকে গোলাম মর্তুজা মথুরাপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে সম্প্রতি একটি মাদক মামলায় তার দুই বছরের সাজার বিষয়টি শুনেছিলাম। তাই এবিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিষয়ে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যাপক টিআইএম নূরুন্নবী তারিক বলেন, যুবলীগ থেকে প্রার্থী হয়ে গোলাম মর্তুজা ভোটের মাধ্যমে মথুরাপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু তখন তার মামলার বিষয়ে কারো কোন অভিযোগ ছিল না। কিন্তু এখন জানতে পেরেছি একটি মাদক মামলায় আদালত তাকে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ি ইউনিয়ন আ’লীগ ১নং যুগ্ন সম্পাদককে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আব্দুল মান্নানকে দায়িত্ব প্রদান করেছেন। এছাড়া গোলাম মর্তুজারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে আওয়ামীলীগের স্থানীয় ও শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে স্থায়ীভাবে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।