ধুনটে তিন ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে ভূমি অফিসের মামলা

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের বিলচাপড়ী জোড়া সেতুর পাশে বাঙ্গালী নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করায় তিন ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভূমি অফিস। মঙ্গলবার (১ আগষ্ট) রাতে এলাঙ্গী ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুস শুকুর বাদী হয়ে ধুনট থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলা ও স্থানীয়সূত্রে জানাগেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার যমুনা, বাঙ্গালী ও ইছামতি নদীসহ অভ্যন্তরীন বিভিন্ন নদ-নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে কতিপয় ভূমিদস্যুরা। নদীর গভীর তলদেশ থেকে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করায় নদীর গভীরতা সৃষ্টি হয়ে প্রতিদিনই প্রায় নদীর তীরবর্তী কৃষকের শতাধিক হেক্টর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তবে মাঝেমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসন এসব ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার এবং মামলাসহ মালামাল জব্দ করলেও পরবর্তীতে প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে আবারো তারা একই পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করতে থাকে।

সম্প্রতি বিলচাপাড়ী বাঙ্গালী নদীর জোড়া সেতুর উত্তর ও দক্ষিন পাশে ৪টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছিল ভূমিদস্যুরা। তন্মধ্যে বিলচাপড়ী গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে রবিউল হাসান উৎসবের (৪০) দুটি ড্রেজার মেশিন, আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল মোমিনের (৩৫) একটি ও ইয়াকুব আলীর ছেলে আব্দুল আলিমের (৪২) একটি ড্রেজার মেশিন রয়েছে।

এদিকে এই সংবাদে পেয়ে গত ৩০ জুলাই ধুনট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরুল আমিন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলে ভূমিদস্যুরা আগেই সংবাদ পেয়ে সেখান থেকে সটকে পড়ে। পরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নূরুল আমিন নদীতে থাকা ৪টি অবৈধ ড্রেজার মেশিন জব্দ করে স্থানীয় এলাঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হকের জিম্মায় রাখেন।

এবিষয়ে স্থানীয় কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, বিলচাপড়ী এলাকার রবিউল হাসান উৎসব, মোমিন ও আলিম দীর্ঘদিন ধরেই তারা এই নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছে। ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করার কারনে মাত্র ৬ মাসেই তার ২০ শতক জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে বালু উত্তোলন করায় আরো প্রায় শতাধিক কৃষকের জমিও নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে এবং বিলীন হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ভূমিদস্যুরা প্রাভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বালার সাহস পায় না। তারা প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকেই ম্যানেজ করেই এই ব্যবসা করে যাচ্ছে। ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তারা গ্রেফতার হয় না। একারনে কিছু দিন পরই তারা একইভাবে এই ব্যবসা চালিয়ে যায়।

তবে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শুধু বাঙ্গালী নদীর বিলচাপড়ী এলাকাতেই নয়, একইভাবে বেড়েরবাড়ি, জয়শিং, নাংলু, চৌকিবাড়ী, পেঁচিবাড়ী, বথুয়াবাড়ি বাঙ্গালী নদী সহ যমুনা ও ইছামতি নদীর প্রায় শতাধিক পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়।

ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম জানান, বালু উত্তোলনের বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে এবং আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এবিষয়ে ধুনট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরুল আমিন বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে এসব ভূমিদস্যুদের গ্রেফতারের বিষয়টি পুলিশ দেখবে।