বগুড়ায় ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে ভাগ্য বদলে গেল শাওনের

সাজু মিয়া, শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি: অনুসন্ধানবার্তা
বগুড়ার শিবগঞ্জে শাওন ভার্মি কম্পোষ্ট সার কৃষকদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে। শাওন ভার্মি কম্পোষ্ট সার উৎপাদন করে ভাগ্য বদলে গেছে শিবগঞ্জ উপজেলার হাবিবুল আলম হুদা শাওনের। তিনি এখন একজন তরুণ সফল উদ্যোক্তা। শাওন উপজেলা সদরের চাঁদনিয়া গ্রামের ছামছুল হুদার ছেলে।

শাওনের বাবা একজন এলাকার ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু তার বাবার হঠাৎ করে ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় কিছুটা বিপাকে পরে পরিবারটি, শাওন হয়ে পড়ে বেকার। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে শাওন উপজেলার যুব উন্নয়ন অফিস থেকে যুব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। গরুর খামার গড়ে তোলেন। তিনি কৃষি বিভাগ থেকে জানতে পারেন গরুর গবর থেকে ভার্মি কম্পোস্ট কেঁচো সারের গুণাগুণ ও উৎপাদনের বিষয়টি। এ থেইে তিনি ভার্মি কম্পোস্ট কেঁচো সার উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হন।

শাওন জানতে পারেন, কৃষি জমিতে জৈব সার প্রয়োগের কোন বিকল্প নাই। কৃষকরা তাদের জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে কৃষি জমির উর্বরতা হারাতে বসেছেন। ফলে কৃষি পণ্য উৎপাদন হ্রাস পেতে শুরু করেছে। তাছাড়া রাসায়নিক সার আমদানি নির্ভর হওয়ায় সরকারকে সার আমদানীতে অনেক ভুর্তুকি দিতে হয়। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ, কৃষির বিকল্প কিছু নাই। তাই কৃষকের জমির উর্বরতা শক্তি ফিরিয়ে আনতে প্রথম দিকে পিতার পরিত্যাক্ত ধানের চাতালে স্বল্প পরিসরে কেঁচো ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদান প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি।

তার ফার্মের গরুর কাঁচা গোবর ৩-৪ মাস জমা করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন। শাওন ভার্মি কম্পোস্ট সার এলাকার কৃষকরা কৃষি জমিতে প্রয়োগ করে ভালো ফসল উৎপাদন করছেন। ফলে এলাকার কৃষকদের মাঝে তার কেঁচো সারের চাহিদা বেড়ে গেছে। ধীরে ধীরে শাওন “শাওন ভার্মি কম্পোস্ট” সার নামে প্রতিষ্ঠান দিয়ে বৃহৎ আকারে সার উৎপাদন শুরু করেন।

এ ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে একদিকে কৃষক লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার থেকে বিরত থাকছে কৃষক। শাওন এর প্রচেষ্টায় এ এলাকার কৃষকরা তাদের জমিতে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করছে। এখন শাওন এর সার তত্বাবধানে ৭জন লোক কাজ করছে।

এ বিষয়ে পূর্ব জাহাঙ্গীরাবাদ কাজীতলা এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, আমরা জমিতে ফলন বৃদ্ধির জন্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছি। কিন্তু শাওন যখন কেঁচো ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছে, আমরা প্রথম দিকে কিছু জমিতে এ সার প্রয়োগ করি। এ সার প্রয়োগের ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে ও ফসলও বেশ ভালো হয়েছে।

এব্যাপারে শাওন হুদা বলেন, আমি বেকার অবস্থায় উপজেলা যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণগ্রহণ করে গবাদি পশু লালন পালন শুরু করি। আমার খামারের গবাদি পশুর বর্জ্য থেকে কেঁচো ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের চেষ্টা করি। শুরুতেই ৮ কেজি কেঁচো ক্রয় করে ২০টি পাঠের রিং এর মাধ্যমে সার উৎপাদনের প্রক্রিয়াজাত করতে থাকি। এলাকার কৃষকরা আমার ভার্মি কম্পোজ সার জমিতে ব্যবহার করে ভালো ফসল উৎপাদন করায় তারা আমার নিকট থেকে ভার্মি কম্পোষ্ট সার সংগ্রহ করে থাকেন।

এখন আমি ২-৩ টন গোবর প্রক্রিয়াজাত করে করে জৈব সার ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছি। প্রতিকেজি সার উৎপাদনে ১০-১৫ টাকা ব্যয় হয়। আমি প্রতিমাসে এখন প্রায় ১৩ টন সার উৎপাদন করে থাকি। এতে আমার প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। কেঁচো সার আমার ভাগ্য বদলের সিড়ি বলে আমি মনে করি। যা আমার জীবনেক অনেক বদলে দিয়েছে।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল-মুজাহিদ সরকার বলেন, কৃষিতে জৈব সারের বিকল্প নাই। কৃষি জমিকে উর্বর করতে জৈব সার ব্যবহারে কৃষককে উদ্বুধ করতে হবে। শাওনের মত তরুন উদ্যোক্তরা এ সার উৎপাদন কাজে এগিয়ে আসতে পারেন। তাহলে কৃষি খাতকে ও কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। এ ভার্মি কম্পোষ্ট সার ব্যবহারে ফসলের ফলন বৃদ্ধি পাবে। কৃষকদের রাসায়নিক সার ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আসবে। বাণিজ্যিক ভাবে ভার্মি কম্পোষ্ট সার উৎপাদন করে লাভবান হওয়া সম্ভব।