নবান্ন উৎসবে বগুড়ায় মাছের মেলা

সাজু মিয়া, শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি: অনুসন্ধানবার্তা
সনাতন পঞ্জিকার হিসাব অনুসারে শনিবার ছিলো পহেলা অগ্রহায়ণ। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলী হাটে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বসেছে নবান্ন মেলা। কাছের ও দুরের ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত ছিলো এবারের নবান্ন মেলা। দেশের সব ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর কাছে এ উৎসবটি সার্বজনীন। এ উৎসবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে মুসলমান ধর্মাবলম্বীরাও নবান্ন উৎসবে মেতে উঠেছিল।

নবান্ন উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় তিনশত বছরের ঐতিহ্যবাহি মাছ মেলা হয় এই উথলীতে। বড় বড় হরেক রকমের মাছের পসরা সাজিয়ে বসে এই মাছের মেলা। পাশাপাশি নতুন সবজি, মিষ্টি, মাংস, মাটির তৈরী তৈজাসপত্র, দই, চিরা কেনাবেচা হয় এ মেলায়। এ মেলা এলাকায় জামাই মেলা নামেও পরিচিত।

হাট ইজারাদার সূত্রে জানা যায়, এবারের মেলায় প্রায় দেড় হাজার মণ মাছ কেনাবেচা হয়েছে। ২ কেজি থেকে শুরু করে ২০ কেজি ওজনের ব্রিগেড মাছ, ব্লাক কার্প, রুই, কাতলা, বাগার, সিলভার কার্পসহ নানা প্রজাতির মাছ বিক্রি হয়েছে মেলায়।

তবে গত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম অনেকটায় বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। রুই-কাতলা ৫৫০-৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা দরে ব্ল্যাককার্প, ব্রিগেড ও সিলভার কার্প মাছ বেচাকেনা হয়েছে। উথলী মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের ২২ গ্রামে স্বজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

উথলী, রথবাড়ি, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, আকন্দপাড়া, গরীবপুর, দেবিপুরসহ ২২ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে ছিলো এ উৎসবের আয়োজন। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের আগেই নিমন্ত্রণ করা হয়। এই মেলায় নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়াও মিষ্টি আলু ও কেশর (ফল) প্রতি কেজি ৩শত টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল বাছেদ, প্রদীপ চন্দ্র দাস বলেন, নওগাঁ জেলার আত্রাই, নাটোরের সিংড়া এলাকা থেকে প্রায় ৫০মণ বিভিন্ন ধরনের মাছ বিক্রি করার জন্য এই মেলায় নিয়ে আসা হয়েছে। প্রতিটি মাছ দুই হাজার থেকে ১০হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তারা।
মেলায় ঘুরতে আসা মল্লিকা রানী (৯৫) বলেন, আমার বিয়ের পর থেকেই আমি এই মেলা দেখতে আসি। মেলায় এসে আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি এবং পরিবারে জন্য বড় মাছ কিনেছি।

মেলায় মাছ কিনতে আসা ব্যবসায়ী ভোজেন সাহ জানান, বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আসায় ৫হাজার ৪শ টাকায় সাড়ে ৯ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ কিনেছি।

শিবগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উথলী গ্রামের মোজাফ্ফর হোসেন খলিফার জামাই বজলুর রহমান বলেন, আমি উথলীতে বিয়ে করার সুবাদে প্রতিবছর শশুর বাড়িতে বেড়াইতে আসি। এই এলাকার জামাই হিসাবে মেলা থেকে মাছ, দই ও মিষ্টি ক্রয় করতে হয়। এটাই এ মেলার ঐতিহ্য।

হাটের ইজারাদারের পক্ষে আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য অংশ হিসেবে প্রতিবছর সুষ্ঠভাবে নবান্ন উপলক্ষে একদিনের এই নবান্নের মেলা হয়ে আসছে। গত ৩০বছর ধরে এ হাটে নবান্নের উৎসব উপলক্ষে মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবার মেলায় দেড় হাজার মণের বেশি মাছ কেনাবেচা হয়েছে বলে তিনি জানান। এই উৎসব উপলক্ষে উপজেলাসদর, মহাস্থান, আমতলী, বুড়িগঞ্জ, কিচক, গুজিয়া ও দাড়িদহসহ বিভিন্ন বন্দরে মাছ ব্যবসীদের বড় বড় মাছ বিক্রয় করতে দেখা গেছে।