বগুড়া-৪ আসনে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার, অনুসন্ধানবার্তা:
একটি রাজনৈতিক দলের মনোনীত হয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র যথাযথভাবে পূরণ না করায় আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের প্রার্থীতা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

রবিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম তার মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেন। এই দিন বগুড়া-১, ২,৩ ও ৪নং আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ র্নিবাচনে অংশ নিতে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করা হয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী হন হিরো আলম।

তবে যাচাই-বাছাইকালে রিটার্নিং কর্মকর্তারা দেখতে পান হিরো আলম যথাযথভাবে মনোনয়নপত্র পূরণ করেননি। এ জন্য তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।

রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, দলীয় প্রার্থী হলেও হিরো আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র পূরণ করেন। রাজনৈতিক দলের স্থানে হিরো আলম লেখেছেন প্রযোজ্য নহে। দলীয় মনোনয়নে তার মূল কপি জমা দেননি। ফটোকপি দিয়েছেন। এটা একটি বিষয়।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তার ভোটার তালিকার এক শতাংশ সমর্থনের তথ্য জমা দিতে হবে। উনি সেটিও করেননি। এখানেও আইনের ব্যতয় হয়েছে। এছাড়া হিরো আলম তার হলফনামার সঙ্গে সম্পদের আয়ব্যয় বিবরণী জমা দেননি। তার হলফনামা নোটারি পাবলিক করা থাকলেও সেখানে স্বাক্ষর করেননি হিরো আলম।

এ সময় হিরো আলম স্বাক্ষর করার সুযোগ চান। তিনি বলেন, সম্পদ বিবরণী আছে। সেটা দেয়া ছিল, উকিল জমা দিতে ভুল করেছে। আর হলফনামায় এখন স্বাক্ষর করে দিচ্ছি।

কিন্তু সভাকক্ষে উপস্থিত অন্য প্রার্থীরা এটাতে আপত্তি জানান। তারা জানান, মনোনয়নপত্রে হলফনামা দেয়ার বিষয়টি একটি আইনগত প্রক্রিয়া। কারণ হলফনামায় লেখার পর একজন সেখানে সনাক্ত করতে হবে। এরাপর একজন ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সেটি ভ্যারিফাই করতে হয়। উনি সেটি অনুসরণ করেননি। এখন হলফনামায় স্বাক্ষর করা সম্ভব না।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আরো বলেন, হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তবে উনি চাইলে আমার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ৩ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার মধ্যে রায়ের কপি নিয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করার সুযোগ পাবেন।

এবিষয়ে হিরো আলম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটা কোন বিষয় নয়। এর আগেও বাতিল করেছিল। হাইকোর্ট থেকে রায় এনেছি, এবারও তাই করবো’।

এর আগে চলতি বছরে বগুড়ার ৪ ও ৬ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন হিরো আলম। কিন্তু সেখানেও যাচাই-বাছাইকালে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। ওই বাতিলের কারণ ছিল হিরো আলমের ১ শতাংশ ভোটার তালিকায় গরমিল। পরে হাইকোর্ট থেকে প্রার্থীতার বৈধতা এনে নির্বাচন করেন। তবে দুটি আসনেই পরাজয় হয় হিরো আলম।

পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনে উপ-নির্বাচনেও অংশ নিয়েও পরাজিত হয়ে জামানত হারান।

এছাড়া ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া- ৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন হিরো আলম। যদিও পরে ‘অনিয়মের অভিযোগ তুলে’ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

জানাগেছে, বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিরো আলম শৈশবে চানাচুর বিক্রি করতেন। পরে তিনি সিডি বিক্রি এবং ডিশ সংযোগের ব্যবসা করেন। নিজেই মিউজিক ভিডিও তৈরি করে ডিশ লাইনে সম্প্রচার শুরু করেন। ইউটিউবে প্রায় ৫০০ মিউজিক ভিডিও ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন হিরো আলম।