ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দিলেন ধুনটের অন্ধ পরিবারের সেই আরজিনা

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার আরকাটিয়া গ্রামের অন্ধ পরিবারের এক সদস্য আরজিনা বেগম (৪০)। দু’চোখের দৃষ্টি না থাকায় ফুটফুটে সন্তানটিকেও দেখতে পাননি গর্ভধারিনী মা। তারপরও দৃষ্টিহীন ভালোবাসায় বুকে আগলে রেখেছেন বুকের মানিককে।

দৃষ্টিহীন আরজিনা বেগম ধুনট উপজেলার আরকাটিয়া গ্রামের দৃষ্টিহীন মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। তবে শুধু আরজিনা বেগমই নয়, তার বাবা মোহাম্মদ আলী, মা জায়দা বেগম, বোন মহেদা, দুখিনী ও ভাই সাইদুল সহ একই পরিবারের ৬জনই অন্ধ। জীবিকার তাগিদে তারা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে। ওই অন্ধ পরিবারের ৩ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়ের ভাগ্যক্রমে বিয়ে হয়। তন্মধ্যে দুখিনীর ডিভোর্স হলেও আরজিনা বেগম সংসার করছেন।

গত মঙ্গলবার বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে এক পুত্র সন্তান জন্ম দেন আরজিনা। তবে এক ফুটফুটে সন্তান জন্ম দিলেও মা আরজিনার চোখে দৃষ্টি না থাকায় বুকের মানিকের মুখটাও দেখতে পাননি তিনি। এদিকে দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী আরজিনা বেগমের ফুটফুটে ছেলে জন্ম দেয়ার কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

জানাগেছে, আরজিনা বেগম বগুড়ার ধুনট উপজেলার একই পরিবারেরর অন্ধ ৬ সদস্যের মধ্যে একজন। তার বাবা, মামা, ভাই-বোন সহ পরিবারের সবাই অন্ধ। পেশায় সবাই ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত দেড় বছর আগে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি এলাকার আব্দুল কাদের নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে অন্ধ আরজিনা বেগমের বিয়ে হয়। এরপর স্বেচ্ছায় অন্ধ শ^শুরবাড়িতে ঘরজামাই থেকেই বাসবাস করে আসছে ধুনট বাজারের ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা কাদের।

দৃষ্টিহীন আরজিনার স্বামী আব্দুল কাদের বলেন, আমার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর সব কিছু জেনেই অন্ধ আরজিনাকে মানবিক কারনে বিয়ে করেছি। এরপর জীবিকার তাগিদে ধুনট বাজারে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাই। আমার অন্ধ স্ত্রীর গর্ভে এমন ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম হওয়ায় আমি খুব খুশি।

তবে দীর্ঘদিন ধরেই এই দৃষ্টিহীন পরিবারের ৬ সদস্যের অন্তদৃষ্টি ফেরাতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে ধুনট উপজেলার দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্বপ্নদ্রষ্ট্রা খ্যাত সংগঠন স্বপ্ন সেবা। এই সংগঠনটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সহ স্বেচ্ছাসেবীরা ২০১৬ সাল থেকে দৃষ্টিহীন পরিবারের অন্তদৃষ্টি ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছেন।

স্বপ্ন সেবা সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরাই প্রথম স্বেচ্ছাসেবীরা এই অন্ধ পরিবারের ৬ সদস্যের দায়িত্ব নেই। এছাড়া আমাদের সংগঠন থেকে এই উপজেলার প্রায় ২ শতাধিক প্রতিবন্ধীকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমাদের সংগঠনের সহযোগিতার কারনেই অন্ধ আরজিনা বেগম তার অন্তদৃষ্টি দিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করছে। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে এই অন্ধ পরিবারটি বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পাবে।