জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর: অনুসন্ধানবার্তা
শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষণের জন্য বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ডিজিটাল থার্মাল মেশিনটি এক বছর ধরে নষ্ট হয়ে রয়েছে। ভারতে করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হবার পর সরকার দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত বেনাপোল বন্দরে কোনো ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধে ভারতীয় ট্রাকচালকেরা প্রবেশ করছে বন্দরে। এ ছাড়া পাসপোর্টধারীরাও মাস্ক ছাড়া ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ভ্রমণ করছে। নিরাপত্তাকর্মী থেকে শুরু করে বন্দর ব্যবহারকারী শ্রমিকদের মধ্যেও কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। এতে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় দ্রুত তারা সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এদিকে সর্বশেষ গত ৮ দিনে করোনায় দেশে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে যশোরে মারা গেছেন তিন জন।
বাণিজ্যসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের অবাধ বাণিজ্য ও পাসপোর্টধারী যাতায়াত। সম্প্রতি ভারতে করোনার নতুন ধরন সংক্রমণ বাড়লে প্রতিরোধব্যবস্থা নিতে ১১ জুন বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে দেশের সব স্থলবন্দর, নৌবন্দর ও বিমানবন্দরে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়। তবে এ নির্দেশনার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সতর্কতা নেয়া হয়নি দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম বেনাপোল বন্দরে।
ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ শতাধিক ট্রাকচালক মাস্ক ছাড়াই প্রবেশ করছেন দেশে। বাংলাদেশি ট্রাকচালকেরাও অবাধে ঢুকছেন বন্দরে। এ ছাড়া বন্দরের পণ্য খালাসকারী শ্রমিকদের মধ্যেও কোনো সুরক্ষাব্যবস্থা নজরে পড়েনি। গতবার দেশে সংক্রমণ বাড়লে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় টানা তিন মাস এ রুটে বন্ধ ছিল বাণিজ্য।
এদিকে ভারত থেকে পাসপোর্টধারীরা মাস্ক ছাড়া ঢুকলেও নজর নেই স্বাস্থ্যকর্মীদের। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের দেখলে শুধু দায়সারা কাজ করতে দেখা গেছে। এতে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়ছে।
বেনাপোল আমদানি ও রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, গতবার করোনা বাড়লে তিন মাস বাণিজ্য বন্ধে অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আগাম সতর্কতা না নিলে আবার আগের মতো অবস্থার মধ্যে পড়তে হতে পারে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য বিলকিস সুলতানা সাথি বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে করোনা থেকে সুরক্ষাব্যবস্থা না থাকায় সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বন্দরকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’ সন্দেহভাজন যাত্রীদের কেবল হ্যান্ড থার্মাল দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী মেডিকেল অফিসার আব্দুল মজিদ বলেন, শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষণের জন্য ইমিগ্রেশনে ডিজিটাল থার্মাল মেশিনটি এক বছর ধরে নষ্ট। বর্তমানে সন্দেহভাজন যাত্রীদের হ্যান্ড থার্মাল দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে অনেকেই সুরক্ষা মানতে অনীহা প্রকাশ করছে। এ পর্যন্ত ভারত থেকে আসা আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানতে অনুরোধ জানান এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে সবাইকে তাঁরা মাস্ক পরার নির্দেশ দিয়েছেন। খুব দ্রুত বন্দরে অন্যান্য সুরক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।