বিদেশ যাওয়ায় চাকরি গেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষিকার

জেমস রহিম রানা, স্টাফ রিপোর্টার, যশোর: অনুসন্ধানবার্তা
বিনা অনুমতিতে বিদেশ যাওয়ায় যশোরে চাকরি গেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষিকার। যশোরের সীমান্ত উপজেলার চৌগাছার মাজালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

গত বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে ওই বরখাস্তের আদেশ এসে পৌঁছেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকসহ উপজেলার তিন শিক্ষককে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

চাকুরি থেকে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের মধ্যে বিধি বর্হিভূতভাবে মেডিকেল ছুটি নিয়ে চীনে অবস্থান করা চৌগাছার মাজালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শারমিন সুলতানা জিনিয়া, মেডিকেল ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা উপজেলার বড়খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিশাত মুনাওয়ারা ও উপজেলার কংশারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারহানা সাত্তার।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বিধি অমান্য করায় তাদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। উপজেলার বড়খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিশাত মুনাওয়ারার বরখাস্তের চিঠি বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে এসে পৌঁছায়। তিনি ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর চিকিৎসা ছুটির আবেদন করে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়ে বসবাস করছেন। এ বিষয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৬ মার্চ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। সব প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন।

গত ২ আগস্ট চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় কংশারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক ফারহানা সাত্তারকে। তিনি ২০২২ সালে যশোর পিটিআইএ শিক্ষক প্রশিক্ষণে ভর্তি হন। একই বছরের ১২ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত প্রশিক্ষণে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকেন। এরপর পিটিআইএর সুপার তার ভর্তি বাতিল করেন। কিন্তু তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তিনি বিদ্যালয়েও যোগ দেননি। পরে ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকেও ৩১ আগস্ট চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

এছাড়া উপজেলার মাজালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন সুলতানা জিনিয়া চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে একমাস কর্মরত ছিলেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই চীনে লেখাপড়া করতে চলে যান। অভিযুক্ত শিক্ষিকা চীন থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে চাকুরি থেকে অব্যহতির আবেদন করেন। তার আবেদনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সুপারিশে গত ৩১ আগস্ট তাকে চাকরি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। পরে ওই পদটি শূন্য ঘোষণা করেন যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম।

এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই তিন শিক্ষক কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়। পরে চাকরি থেকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও কারণ দর্শানোর নোটিশ করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিন জনের মধ্যে একজনের আবেদনের ভিত্তিতে চাকরি থেকে অব্যহতি ও দুজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।