ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা :
গ্রুপিং রাজনীতি ভুলে গিয়ে প্রায় ১০ বছর পর ঐক্যের পথে হাঁটছে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সম্মেলনের পর পরই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী দুটি গ্রুপই সকল দ্বন্দ্ব ভুলে এখন ঐক্যের পথে হাঁটছে।
তবে দীর্ঘ বছরের এই রাজনৈতিক গ্রুপিং এর কারনে আওয়ামীলীগের দুটি গ্রুপের পাল্টা-পাল্টি সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ১২টির মতো মামলাও দায়ের হয়েছে। এই সব মামলায় আওয়ামীলীগের দুটি গ্রুপের প্রায় দেড় হাজারের মতো নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে।
জানাগেছে, ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমান প্রথম এমপি নির্বাচিন হন। তাঁর নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলায় বিএনপির দূর্গে আঘাত আনে আওয়ামীলীগ। তবে এই উপজেলাটি আওয়ামীলীগের দুর্গে পরিনত হলেও কয়েক বছর পরই শুরু হয় গ্রুপিং রাজনীতি।
এই গ্রুপিং রাজনীতিতে এক পক্ষে ছিলেন স্থানীয় এমপি হাবিবর রহমান এবং অপর পক্ষে ছিলেন সাংসদ মনোনয়ন বঞ্চিত বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি মজিবর রহমান মজনু।
এদিকে স্থানীয় এমপি হাবিবর রহমানের পক্ষে তার ছেলে তরুন রাজনীতিবিদ প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল সনির নেতৃত্বে সৃষ্টি হয় এমপি গ্রুপ। অপরদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে সৃষ্টি হয় মজনুর সমর্থক ধুনট উপজেলা আ’লীগের সভাপতি তারিক গ্রুপের।
দীর্ঘ ১০ বছরের এই রাজনৈতিক গ্রুপিং এর কারনে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসংখ্যবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব দ্বন্দ্বের মূল কারন হিসাবে ছিল সাংসদ নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, বহিস্কার-বহাল ও আ’লীগের সম্মেলন।
এদিকে গত ২৪ অক্টোবর দীর্ঘ ১২ বছর পর বগুড়ার ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হিসাবে ছিলেন এমপি হাবিবর রহমানের ছেলে আসিফ ইকবাল সনি ও অধ্যাপক টিআইএম নূরুন্নবী তারিক।
এই সম্মেলনকে ঘিরে আবারো তুঙ্গে ওঠে এই দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব। অবশেষে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের হস্তক্ষেপে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব এখন মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। ওই সম্মেলনে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে ৪র্থ বারের মতো নির্বাচিত হন অধ্যাপক টিআএম নূরুন্নবী তারিক। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন এমপি হাবিবর রহমানের ছেলে প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল সনি।
আরো পড়ুন- বগুড়ার সোনাতলা ইউএনও’র স্বামীকে মারপিট, আ’লীগ নেতার ছেলে আটক
দলীয়সূত্রে জানাগেছে, ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে এমপি গ্রুপ ও মজনু গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় ১২টির মামলা দায়ের হয়েছে। এই সব মামলায় এমপি পুত্র ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল সনি, বর্তমান সভাপতি নুরুন্নবী তারিক, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ভিপি শেখ মতিউর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারন সম্পাদক সহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আসামী করা হয়।
তবে এই সব বিষয়ে এমপি হাবিবর রহমানের ছেলে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল সনি বলেন, আমি এলাকায় না থাকার পরও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারনে আমার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও উভয় পক্ষের বিরুদ্ধেই প্রায় ১২টির মতো পাল্টা-পাল্টি মামলাও দায়ের হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এসব মামলার কারনে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছিল। তাই দীর্ঘ বছর পর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আওয়ামীলীগকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করছি এবং বিগত দিনের দায়েরকৃত প্রতিহিংসামুলক মামলাগুলো মিমাংসার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এবিষয়ে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যাপক টিআইএম নূরুন্নবী তারিক বলেন, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে আমাকেও একটি মামলায় আসামী করা হয়েছে। তারপরও আমরা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে পুনরায় বিজয়ী করার লক্ষ্যে গ্রুপিং রাজনীতি ভুলে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানানো হচ্ছে।