ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে ডিজিটাল জুয়া!

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :
“চল, এক দ্যান লুডু খেলি” এক সময় বাঙালির ঘরে ঘরে শোনা যেত এই সংলাপ। সেই লুডু এ বার পৌঁছে গেছে জুয়ার তালিকায়। লুডু খেলতে কতটা বুদ্ধি দরকার, না কি শুধুমাত্র ভাগ্যের জোরেই জেতা যায়, তা নিয়েই এক সময় কঠিন টক্কর চলতো।

কিন্তু এক সময়কার সেই লুডু খেলা পরিনত হয়েছে ডিজিটাল জুয়ায়।

ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের প্রত্যন্ত এলাকায় মোবাইলে লুডু খেলা এখন ডিজিটাল জুয়ায় পরিণত হয়েছে। এক সময়ে যে লুডু বোর্ড ছিল কাগজের তৈরি এখন তা মোবাইলে অ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া যায়। এ মোবাইলের মাধ্যমেই চলছে সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ডিজিটাল জুয়া।

স্মার্টফোনে ‘লুডু কিং’ নামে একটি অ্যাপ ইনস্টল করে সর্বোচ্চ আটজন মিলে এ খেলা খেলতে পারেন। খেলার ধরন রয়েছে দুই প্রকার। একটি অনলাইনের মাধ্যমে অপরটি একটি মোবাইলে একইসঙ্গে বসে খেলা। তবে অনলাইন ছাড়া একসঙ্গে চারজনের খেলার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে ডিজিটাল জুয়া!

চারজন মিলে খেললে একেকটি গেম শেষ হতে সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট। প্রতি গেমে বাজি ধরা হয় ১০০-৫০০ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ আরও বেশি হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রুহিয়া থানাধীন এলাকার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে নিরিবিলি জায়গায় ৩ থেকে ৪ জন একসঙ্গে বসে মোবাইল ফোনে এ গেম খেলছে। এমনকি বিভিন্ন চায়ের দোকানেও কিশোর-তরুণদের এ জুয়া খেলায় দেখা গেছে। প্রতিটি গেমে খেলোয়াড়রা কমপক্ষে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা বাজি ধরছে। সারাদিন তাদের এ খেলা চলতেই থাকে। এতে পরিবারগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে বিপথগামী হয়ে পড়ছে তরুণ এবং কিশোরেরা।

শুধু তাই নয়, মাঝে মাঝে তাঁরা জুয়ার টাকা জোগাড় করতে নানা অপকর্মেও জড়িয়ে পড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, তিনি পেশায় (কসাই) গরু গোস্তের দোকান করেন। এক সময় নিয়মিত মোবাইল ফোনে লুডু কিং এর মাধ্যমে জুয়া খেলতেন। খেলতে খেলতে এমন নেশা হয়েছিল যে শেষ পর্যন্ত ব্যবসার মূলধন হারিয়ে এখন তিনি বেকার হওয়ার পথে।

ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের রুহিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ বলেন, এসব ডিজিটাল জুয়াড়িরা যখন সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেন তখন তারা সামাজিক নানা প্রকার অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তাই এ ধরনের জুয়া বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

এব্যাপারে রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চিত্র রঞ্জন রায় বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের সামসুজ্জামান বলেন, জুয়া খেলা একটি ফৌজদারি অপরাধ। এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।