মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অপচেষ্টা করায় সমালোচনার মুখে বগুড়া জেলা আ’লীগের সভাপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনুসন্ধানবার্তা, বগুড়া:
দেশের জন্য যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অপচেষ্টা করায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু। জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম অর্ন্তভুক্ত করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছে। ২০২২ সালের ১০ মার্চ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭৮তম সভায় মজিবর রহমান মজনুর ১৮৬৩নং বেসামরিক গেজেটটি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়।

এদিকে সম্প্রতি বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির এই জালিয়াতির বিষয়টি জানা জানি হওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকেই।

অভিযোগ ও স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার উলিপুর গ্রামের জসমতুল্লাহ’র ছেলে বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবর রহমান মজনুর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ এনে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের সাঁওইল গ্রামের মৃত মশরতুল্লাহ প্রামানিকের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান। তার মুক্তিযোদ্ধার নাম্বার (লাল মুক্তিবার্তা) ০৩০৬০৯০১২১।

এদিকে আদমদীঘির ওই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমানের নামের সঙ্গে মিল থাকায় তার লামুক্তিবার্তা নাম্বার ব্যবহার করে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য আবেদন করেন। এদিকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না হওয়ায় ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি যাচাই বাছাইকালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর আবেদন না মঞ্জুর হয়ে ৮৫ নাম্বার সিরিয়ালে বাদ দেয়া হয়।

এরপর তিনি আবারো কৌশল অবলম্বন করে ২০২১ সালের ৯ জানুয়ারিতে যে যাচাই বাছাই তালিকা প্রকাশ হয় সেখানে তার নাম অর্ন্তভূক্ত করায়। সেখানে দেখা যায় আ’লীগ নেতা মজিবর রহমান মজনু তার পিতা জসমতুল্লাহ’র নামের জায়গায় মশমতুল্লাহ নাম ব্যবহার করেছেন।

২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি যাচাই বাছাইকালে আদমদীঘির সেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মজিবরকে বাদ দিয়ে তার লাল মুক্তিবার্তা নাম্বার (৩০৬০৯০১২১) ব্যবহার করে জেলা আ’লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু মুক্তিযোদ্ধা বনে যান।

তবে এর আগে ২০১০ সালের ৯ মার্চ তারিখে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার লাল মুক্তিবার্তা তালিকায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আ’লীগ নেতা মজিবর রহমান মজনুর কোন নাম ছিলো না।

এদিকে জেলা আ’লীগ সভাপতির এই জালিয়াতির প্রতিবাদে আদমদীঘি এলাকার সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করে সেই সময় বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশও করেন।

আদমদীঘি এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা তোজাম্মেল হক ও আবদুর রহমান বলেন, একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম্বার ব্যবহার করে অন্য কারো মুক্তিযোদ্ধা সাজার অপচেষ্টা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করা।

তারা আরো বলেন, আমরা মজিবর রহমানের সঙ্গে এক সাথে যুদ্ধ করেছি। তাই এবিষয়ে তার নাম বাদ দেয়ায় মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগের পর ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি আ’লীগ নেতা মজিবর রহমান মজনুর মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হয়।

এরপর বেসামরিক গেজেট থেকে তার নাম বাতিল করার জন্য ২০২১ সালের ৮ মার্চ প্রকৃত বীরমুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছে আবেদন জানান। এর পরপরই যাছাই-বাছাই শেষে সম্প্রতি জেলা আ’লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের ১৮৬৩নং গেজেটি বাতিল করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. রেজাউল করিম মন্টু বলেন, জেলা আ’লীগের বর্তমান সভাপতি মজিবর রহমান মজনু কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এমন তথ্য তার জানা নেই।

তবে এ ব্যাপারে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু বলেন, এবিষয়ে আমি কোন চিঠিপত্র পাইনি। গেজেটের বিষয়েও কোন তদন্ত করা হয়নি। তারা আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ দিয়েছিলো আমি সেটা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছি, এই তথ্য মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তিনি আরো বলেন, আমি যখন আপিল করেছি সেখানে আমি কারো লাল মুক্তিবার্তা নাম্বার ব্যবহার করিনি। আমার গেজেট নাম্বার আলাদা। তার সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।