বগুড়ায় উৎপাদিত হাইব্রিড কাঁচা মরিচ চাষ হচ্ছে দেশের ৫০ জেলায়
বগুড়ার ধুনট উপজেলার বাকশাপাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেনের নার্সারীতে শোভা পাচ্ছে হাইব্রিড জাতের কাঁচা মরিচের চারা। -অনুসন্ধানবার্তা

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা :

বগুড়ায় নার্সারীতে উৎপাদিত হাইব্রিড জাতের শীতকালীন কাঁচা মরিচের চারা এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। বগুড়ার মরিচের চারা গাছ রোপনে অধিক ফলন হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষকের কাছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বগুড়ার ধুনট, সারিয়াকান্দি, গাবতলী, শাজাহানপুর, এবং নন্দীগ্রামের কৃষকের জমির বীজ তলা ও নার্সারী থেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকেরা। চারা বিক্রেতারাও বীজ তলা থেকে চারা তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশের বিভিন্ন জেলায় বগুড়া অঞ্চলের মরিচের চাহিদা থাকায় এবার চারা উৎপাদনও হয়েছে ব্যাপকভাবে।

বগুড়া জেলায় প্রায় ৩০০টির মতো বিভিন্ন মৌসুমী, শীতকালীন ফসল ও সবজি চাষের নার্সারী রয়েছে। তন্মধ্যে শাজাহানপুর উপজেলার টুপিনগর, শাহনগর ও বড়পাতা গ্রামেই রয়েছে ১৫০টির মতো ছোট বড় নার্সারী।

ধুনট উপজেলার বাকশাপাড়া গ্রামের নার্সারী মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, শ্রাবন ও ভাদ্র মাসে মরিচের চারা উৎপাদনের জন্য বীজ বপন করতে হয় এবং এরপর ২২ দিনে চারা লাগানোর জন্য উপযুক্ত হয়। চারা রোপনের ৫০ দিনের মাথায় মরিচ ধরতে শুরু করে।

এবার তিনি ৩ বিঘা জমিতে বিজলী প্লাস এবং ২ বিঘা জমিতে গ্রীন সুপার জাতের মরিচের বীজতলা তৈরী করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৫ লাখ চারা উৎপাদন হয়েছে। এই জাতের মরিচ চাষ করলে আগাম ফলন বাজারে তোলা যায় এবং দামও তুলনামূলক ভাল পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার টুপিনগর ইউনিয়নের শাহনগর গ্রামের আজিজার রহমান জানান, এবার তিনি ৫ বিঘা জমিতে বিজলী ও বিজলী প্লাস জাতের মরিচের বীজতলা তৈরী করেছেন। স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি জামালপুর, রংপুর, দিনাজপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকরা এসে তার বীজতলা থেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি হাজার মরিচের চারা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল গ্রামের কৃষক সিদ্দিক হোসেন জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের বিজলী প্লাস জাতের মরিচের চারা রোপন করেছেন। প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ মন পর্যন্ত মরিচ উৎপাদন হয়ে থাকে। হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করলে আগাম ফলন এবং দামও ভাল পাওয়া যায়। তাই বগুড়ায় উৎপাদিত এই জাতের মরিচের চারা গাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

ধুনট বাজারের কাঁচা মরিচ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, সারা দেশে কাঁচা মরিচ চাষ হলে বাহিরের দেশ থেকে আর আমদানি করতে হবে না। বেশি উৎপাদন হলে রফতানীও করা সম্ভব হবে।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মশিদুল হক জানান, হাইব্রিড জাতের কাঁচা মরিচ শীতের প্রথম দিকে বাজারে উঠতে শুরু করে। কৃষকদের এই জাতের মরিচ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন জানান, বগুড়ায় উৎপাদিত কাঁচা মরিচের চারা দেশের প্রায় ৫০টি জেলায় চাষাবাদ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলায় প্রায় সাড়ে ৯শ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চারা উৎপাদন হয়েছে। হাইব্রিড জাতের এই কাঁচা মরিচ চাষ দেশের অনেকটাই চাহিদা পূরণ করছে।