ধুনটে ঘুষ না পেয়ে ৫৮ মিল মালিককে বরাদ্দ দেননি খাদ্য নিয়ন্ত্রক

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ঘুষের টাকা না পেয়ে লাইসেন্সকৃত ৬৭টি রাইচ মিলের মধ্যে ৫৮টি রাইচ মিলই বরাদ্দের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ।

তবে গত বোরো মৌসুমে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে এসব রাইচ মিলকে বৈধ দেখিয়ে বরাদ্দ দিলেও চলতি মৌসুমে ৩ লাখ টাকার চাহিদা পুরন না হওয়ায় রাতারাতি ৫৮টি রাইচ মিলই অবৈধ দেখিয়ে বরাদ্দের তালিকা থেকে বাদ দেন এই কর্মকর্তা।

শুধু তাই নয়, খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল বা ধান ক্রয়ের বিল ভাউচারে স্বাক্ষর নিতে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা, প্রতি মৌসুমে রাইচ মিল সার্ভে রিপোর্ট প্রদানে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা আদায় সহ বিভিন্ন হয়রানীর অভিযোগ করেন ভুক্তভোগি রাইচ মিল মালিকরা।

মঙ্গলবার ওই খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভরত মিলাররা এসব তথ্য জানান।

জানাগেছে, কৃষকের ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে চাল ৪০ টাকা কেজি দরে এবং ধান ২৭ টাকা কেজি দরে ক্রয় করে আসছে সরকার। এই ধারাবাহিকতায় ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী খাদ্য গুদাম ও ধুনট সদর খাদ্য গুদামে প্রতি মৌসুমে সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান এবং লাইসেন্সকৃত মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করা হয়।

প্রতিটি লাইসেন্স প্রাপ্ত মিলারদের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত পরিমান চাল ক্রয় করে থাকে সরকার। কিন্তু চলতি আমন মৌসুমে ধুনট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৬৭টি রাইচ মিলের মধ্যে ৫৮টি রাইচ মিলের অবকাঠামো সঠিক নেই দেখিয়ে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ।

একারনে চলতি আমন মৌসুমে শুধু ৯টি রাইচ মিল থেকে মাত্র ৩৭৯ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৮৭৩ মেট্রিক টন ধান কিনতে যাচ্ছে সরকার। যা গত বোরো মৌসুমে ছিল ৩৩০০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ৩০০ মেট্রিট টন আতপ চাল ও ২১০০ মেট্রিক টন ধান ।

তবে সরকারিভাবে ধান চাল ক্রয় করায় কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পেলেও চলতি আমন মৌসুমে সরকারিভাবে চাল ক্রয়ের পরিমান কম হওয়ায় স্থানীয় বাজারেও ধানের দাম কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন মিলাররা।

ধুনট উপজেলা রাইচ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হামিদ চাল কলের মালিক সাইদুল ইসলাম জানান, প্রতিটি রাইচ মিলের কাগজপত্র ও অবকাঠামো সঠিক থাকলেও টাকা না দিলে হয়রানী করেন খাদ্য কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ। গত বোরো মৌসুমে কাগজপত্র ও অবকাঠামো সঠিক থাকার পরও ৫ লাখ টাকা নিয়ে ৬৭টি মিলারকে বরাদ্দ দিয়েছিলেন এই কর্মকর্তা।

সরাসরি ভিডিও সংবাদ দেখতে নিচে ক্লিক করুন-

কিন্তু চলতি আমন মৌসুমে ধানের দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারনে এই কর্মকর্তার ৩ লাখ টাকার দাবি পুরন না করায় ৫৮টি রাইচ মিলককেই তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এসব বিষয়ে জানতে গেলে তিনি মিলারদের সঙ্গেও অশালীন আচরন করেন।

বেড়েরবাড়ি গ্রামের তিন ভাই চাল কলের মালিক ফারুক হোসেন বলেন, ২০২০ সালে ৮০ হাজার টাকা মূল্যের আমার চারটি পে-অর্ডার আটক রেখেছেন নূর মোহাম্মদ। এরপরে তিনি আমাকে চালও দিতে দেননি। এবার তিনি মিলারদের তালিকা থেকেই বাদ দিয়েছেন।

তবে এই দূর্ণীতিবাজ খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদের হয়রানী থেকে বাদ যাননি ক্ষমতাসীন দলের এমপির ভাইও। ধুনটের জালশুকা গ্রামে এমপি হাবিবর রহমানের বাবা মোজাহার আলীর নামে রাইচ মিলটি পরিচালনা করেন তার ভাই ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম রেজা। কিন্তু অবকাঠামো সঠিক থাকার পরও এবারের তালিকা থেকে তার রাইচ মিলটিও বাদ দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

রেজাউল করিম রেজা বলেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রতি মৌসুমে চাল সরবররাহ করে আসছি। কিন্তু দূণীতিবাদ এই কর্মকর্তা কারো সঙ্গে কোন কথা না বলেই সবগুলো মিলই বাদ দিয়েছেন। এতে এদিকে যেমন মিলাররা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে ধানের কমে গেলে কৃষকেরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বে।

তবে এব্যাপারে ধুনট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, অবকাঠামো সঠিক না থাকায় এসব মিলাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তবে গত মৌসুমে এসব রাইচ মিলগুলো তাহালে কিভাবে সঠিক ছিল, এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে যান তিনি।

এবিষয়ে ধুনট উপজেলা ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, মিলাররা এবিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।