ধুনটে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাঃ সম্পাদককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে নতুন কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনুসন্ধানবার্তা :
বগুড়ার ধুনট উপজেলার পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতাকর্মীদের একের পর এক গণ বহিস্কারে ক্ষুদ্ধ হয়েছে তৃণমুল নেতাকর্মীরা। ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর অনাস্থা জ্ঞাপন ও অবাঞ্চিত ঘোষণা করে ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

শনিবার (০৮ জানুয়ারি) দুপুরে ধুনট উপজেলা পরিষদ সড়কে অবস্থিত আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এই কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে মারা যাওয়া ৭ জন সদস্য বাদে ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের ৬০ জন সদস্যের মধ্যে ৪০ জনই স্বাক্ষর করেন এই নতুন কমিটিতে। ঘোষণা অনুযায়ি ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সোবাহানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মহসীন আলমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গোলাম সোবাহান বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত না নিয়ে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টাকার বিনিময়ে নিজেদের পছন্দের লোকজনকে নৌকার মনোনয়ন পাইয়েছে দিয়েছিলেন। তারা অনেক ইউনিয়নেই সম্মানজনক ভোটও পাননি। এরপর দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের ইচ্ছেমতো যখন তখন যাকে তাকে অগঠনতান্ত্রিকভাবে বহিস্কার করে আসছে। এপর্যন্ত তারা দলের ৫৫ জন ত্যাগি, পরীক্ষিত ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাকে বহিস্কার করেছেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী।

তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরে গোপালনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন জহুরুল ইসলাম তছু। কিন্তু ত্যাগি ও প্রবীন এই নেতাকে অবৈধভাবে ফেসবুকের মাধ্যমে বহিস্কার করা হয়। এছাড়া ওই ইউনিয়নের বার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম হোসেনকেও তারা একইভাবে বহিস্কার করেছেন। দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একক সিন্ধান্তে দলটাকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি বানিজ্য, মনোনয়ন বানিজ্য ও নিয়োগ বানিজ্যে মেতে উঠেছে। তিনি বলেন, গত ১৫ আগষ্ট ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুন্নবী তারিক একটি অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগই খুন করেছে, এরপর বলেন, আওয়ামী লীগের এমপি রাতের এমপি, দিনে হয়েছে, নাকি রাতে হয়েছে এটা সবাই জানে। দলের সভাপতির এমন মন্তব্যের পর থেকেই ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এছাড়া দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকনের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের ১৭টি মামলা আদালতে দায়ের হয়েছে। তাই টাকার বিনিময়ে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অগঠনতান্ত্রিক একক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাদের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আজ থেকে কোন ইউনিয়নে যদি তারা অগঠনতন্ত্র পরিপন্থীভাবে ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কমিটি গঠনের চেষ্টা করেন, তাহলে তাদেরকে সাংগঠনিকভাবে প্রতিহত করা হবে।

তবে এব্যাপারে ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক টিআইএম নূরুন্নবী তারিক বলেন, যারা বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে কাজ করেছেন, আমরা তাদেরকেই কেন্দ্রের নির্দেশ মোতাবেক সমায়িক অব্যাহতি দিয়েছি এবং কেন্দ্রে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে আজকে যারা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন তাদের অধিকাংশকেই অব্যহতি দেয়া হয়েছে। তারা কোনভাবেই নতুন কমিটি গঠন করতে পারবেন না। তবে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে হেয়প্রতিপন্ন করায় তাদেরকে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, রেজাউল করিম দুলাল, শফিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল সনি, সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম খান, দপ্তর সম্পাদক আফসার আলী, কোষাধ্যক্ষ প্রভাষক আনিসুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক গোলাম ওহাব, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট খোদাবক্স, চিকাশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলেফ বাদশা, মথুরাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মর্তুজা,

গোপালনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহুরুল ইসলাম তছু, কালেরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক লিটন, গোসাইবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মিন্টু, সহ প্রচার সম্পাদক মহসীন আলম মিন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য একরামুল হক এটম, ইমরুল কায়েস সেলিম, ধুনট উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বনি আমিন মিন্টু, সহ-সভাপতি আলিম আল রাজি বুলেট, সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান, উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা জাহান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া খন্দকার, শ্রমিকলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক রুবেল মাহমুদ সহ বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।