বগুড়ায় আলু চাষে ভাগ্য খুলেছে কৃষকের: এক বিঘাতেই লাভ অর্ধ লাখ
আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগি বগুড়ার জেলার মাটি। তাই অধিক লাভের আশায় প্রতিটি মৌসুমেই এই জেলার কৃষকেরা বিভিন্ন জাতের আলু চাষাবাদ করে থাকেন। বর্তমানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকেরা আলু চাষে ব্যাপক সাফল্য এনেছেন। ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের মরিচতলা গ্রামের কৃষক ফজলার তার শিক্ষক ছেলেকে নিয়ে আলুর ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। -অনুসন্ধানবার্তা

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা :
আলু চাষের জন্য উপযোগি বগুড়ার জেলার মাটি। তাই অধিক লাভের আশায় প্রতিটি মৌসুমেই এই জেলার কৃষকেরা বিভিন্ন জাতের আলু চাষাবাদ করে থাকেন। বর্তমানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকেরা আলু চাষে ব্যাপক সাফল্য এনেছেন। আর এতেই ভাগ্য খুলেছে কৃষকের।

চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলার ধুনট, শিবগঞ্জ, কাহালু, শেরপুর, সারিয়াকান্দি, গাবতলি, নন্দিগ্রাম, আদমদিঘি, সারিয়াকান্দি ও দূপচাঁচিয়া সহ চরাঞ্চলের কৃষকেরা বিভিন্ন জাতের দেশী ও হাইব্রিড লাভজনক আলু চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় আলু চাষে পরিশ্রম ও খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় কৃষকেরা লাভের মুখ দেখছেন।

বগুড়ায় আলু চাষে ভাগ্য খুলেছে কৃষকের: এক বিঘাতেই লাভ অর্ধ লাখ

ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের মরিচতলা গ্রামের কৃষক ফজলার সরকার জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে দেশীয় জাতের সূর্যমুখি আলু চাষ করেছেন। তবে এরআগেও তিনি একই জমিতে অক্টোবর মাসে দেশীয় লাল পাকড়ী জাতের আলু চাষ করে ছিলেন। এই ফসল ডিসেম্বর মাসে ঘরে তোলার পর আবার একই জমিতে সূর্যমুখি আলু বীজ রোপন করেছেন। তার গাছগুলো এখন পরিপক্ক হতে চলেছে। এই ফলন ফেব্রুয়ারী মাসে ঘরে তুলতে পারবেন তিনি।

কৃষক ফজলার সরকার আরো জানান, তিনি এক বিঘাতে জমিতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে দেশীয় জাতের সূর্যমুখি আলু বীজ রোপন করেছেন। ফলন ঘরে তুলতে আরো প্রায় ৫ হাজার টাকার তার খরচ হতে পারে। আর আলুর ভাল ফলন হলে প্রায় অর্ধ লাখ টাকারও কিছু বেশিতে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদি তিনি।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, আলু চাষের জন্য বগুড়া জেলার মাটি উর্বর ও উপযোগি হওয়ায় বিভিন্ন জাতের দেশীয় ও হাইব্রিড জাতের আলু চাষাবাদ হয়ে থাকে। তন্মধ্যে ডায়মন্ড, কাটিলাল, এ্যাসটেরিক, লাল পাকড়ি, ফাঁটা পাকড়ি ও গ্রানুলা জাতের আলু বেশি চাষ হয়ে থাকে।

কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের মালিগাছা গ্রামের আবু বক্কর ও পাঁচখুর গ্রামের জফের আলী জানান, আলু চাষবাদে তেমন কোন বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তাই তারা এবার দুই বিঘা জমিতে গ্রানুলা জাতের আলু চাষ করেছেন। আশা করছেন প্রতি বিঘা জমি থেকে ১২০ মণ আলু উৎপাদন হবে। তবে গত বছর একই জমিতে আলু চাষ করে প্রায় ৫২ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন বলেও জানান তারা।

শিবগঞ্জ উপজেলার পিরব ইউনিয়নের জামগ্রামের আজিত হোসেন জানান, এই অঞ্চলের মাটি অনেকটাই উর্বরও হওয়ায় আলুর ফলনও ভালো হয়। তাই এই এলাকার প্রায় সব কৃষকই আলু চাষ করে থাকেন।

ধুনট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান বলেন, আলু চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

বগুড়ায় আলু চাষে ভাগ্য খুলেছে কৃষকের: এক বিঘাতেই লাভ অর্ধ লাখ

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) এনামুল হক বলেন, চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলায় ৫৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তন্মধ্যে এই জেলায় ৫৭ হাজার ৭১৭ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এই জেলার উৎপাদিত আলু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।

ভিডিও-