ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনটে সরকারি নীতিমালা অমান্য করে ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে বেসরকারি স্কুল, স্কুল এন্ড কলেজ নীতিমালা ২০২২ অনুযায়ি লটারীর মাধ্যমে ভর্তি করে নেয়ার বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি এই বিদ্যালয়ে।
নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, সরকারি এ নির্দেশনার কোনোরূপ ব্যত্যয় ঘটানো হলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাঠদানের অনুমতি বা একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানের এম.পি.ও ভুক্তি বাতিল করার বিধান রয়েছে।
জানাগেছে, সারাদেশে ভর্তির কার্যক্রম অধিকতর স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে বেসরকারি স্কুল, স্কুল এন্ড কলেজ (মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর) শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২২ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়। গত ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ইং তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আবু বকর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত এক স্মারকে এই নীতিমালা ঘোষণা করা হয়।
নীতিমালা অনুযায়ি ঢাকা মহানগরীর ভর্তি কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির নির্ধারিত তারিখ ও সময় অনুযায়ি নির্ধারিত সফটওয়ারে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি কমিটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের ভর্তি প্রক্রীয়া ডিজিটাল লটারির যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করবে। ডিজিটাল লটারী অনুষ্ঠানের পূর্বে অন্য একটি টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সফটওয়ারের যথার্থতা যাচাইকরণ নিশ্চিত করতে হবে।
লটারীর মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর তালিকা প্রস্তুত করার পশাপাশি শূণ্য আসনের সমান সংখ্যক অপেক্ষমান তালিকা থেকে তালিকার ক্রমানুসারে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাবর্ষের কোন সময়ই এন্ট্রি/প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কোন ধরনের পরীক্ষা গ্রহণ করা যাবে না।
ভর্তি কমিটিতে উপজেলা পর্যায়ে সভাপতি হিসাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সদস্য হিসাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কর্তৃক মনোনীত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা এবং সদস্য সচিব হিসাবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।
কিন্তু বগুড়ার ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ সরকারি এই নীতিমালা অমান্য করে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে লিখিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে। অনলাইলে আবেদন না করেই ২০০ টাকা করে ভর্তি ফরম বিতরণ করে এই বিদ্যালয়। ১৩ ডিসেম্বর ফরম বিতরনের শেষ তারিখ এবং ১৪ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৭০০ এর মতো শিক্ষার্থী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এতে ওই বিদ্যালয়ের আর্থিক লাভ হয় প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মতো।
ধুনট অফিসারপাড়া এলাকার শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন সুমাইয়া জানায়, ধুনট সরকারি এনইউ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু লটারীতে অপেক্ষমান থাকায় পাশ^বর্তী ধুনট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, আমার ছেলে ধুনট সরকারি এনইউ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অবেদন করেছে। কিন্তু তার রোল অপেক্ষমান থাকায় এখনও ভর্তি হতে পারেনি। কিন্তু পাশের ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সরকারি নীতিমালা ভঙ্গ করে ঠিকই ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে।
তবে সরকারি নীতিমালা অমান্যের বিষয়ে ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ বিকাশ চন্দ্র সাহা বলেন, সরকারি নীতিমালা হাতে না পাওয়ায় এবং এই বিদ্যালয়ের কোন ওয়েব সাইট না থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ফরম বিতরণের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। তবে সরকারি নিয়ম নীতির বিষয়টি জানা ছিল না।
তবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ধুনট উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক মহসীন আলম বলেন, যদি সরকারি নীতিমালায় লটারী করার বিধান থাকে, তাহলে পরীক্ষা বাতিল করে নিয়ম অনুযায়ি লটারীর মাধ্যমে ভর্তি করানো হবে।
এবিষয়ে ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ধুনট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল আলম জানান, সরকারি নীতিমালার কপি এখনও হাতে পাইনি। তাই বিষয়টি জানা ছিল না।
এবিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালার বিষয়টি কেউ আমাকে অবগত করেনি। এছাড়া ওই বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টিও আমার জানা ছিল না। তাই এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।