বগুড়ায় ফাঁদে ফেলে অপহরণের পর মুক্তিপন দাবি, নারীসহ ৬জন গ্রেফতার
বগুড়ায় ফাঁদে ফেলে অপহরণের পর মুক্তিপনের দাবিতে নির্যাতনকারী চক্রের নারী সদস্যসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। -অনুসন্ধানবার্তা

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ায় ফাঁদে ফেলে দুই বন্ধুকে অপহরণের পর মুক্তিপনের দাবিতে নির্যাতনকারী চক্রের নারী সদস্যসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। সোমবার (৩ এপ্রিল) গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- পুরান বগুড়া এলাকার মৃত আতাবুল্লাহর ছেলে কোরবান আলী (৩০), রতন চন্দ্র সরকারের ছেলে তাপস চন্দ্র সরকার (২৬), বগুড়ার সুত্রাপুর গোহাইল রোড এলাকার সামসুল হকের ছেলে জান্নাতুল ফেরদৌস সাব্বির (২৪), পুরান বগুড়া বটতলা এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে শহিদ হাসান (২০), পুরান বগুড়া শেরেবাংলা নগর এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে শাহরিয়ার আহমেদ শান্ত (২১) ও বগুড়ার শাজাহানপুর থানাধীন রামচন্দ্রপুর এলাকার মৃত আঃ সাত্তারের মেয়ে রেশমা খাতুন (৩৮)।

পুলিশ জানায়, গত রবিবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানাধীন বাঁশবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার পুটু মিয়া মোল্লার ছেলে তাজনুর আহম্মেদ রানা (৩০) মোটরসাইকেল নিয়ে তার বন্ধু শরিফুল ইসলামের (২৮) সঙ্গে মাঝিড়া যাওয়ার উদ্যেশে বাড়ি থেকে বের হয়।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে রানা তার মোবাইল নাম্বার থেকে তার ভাই রাজুকে ফোন দিয়ে জানায় যে, তাকে কয়েকজন লোক অপহরন করে আটক করে রেখেছে এবং মুক্তিপন হিসেবে তাৎক্ষনিকভাবে ২ লাখ টাকা পৃথক দুইটি বিকাশ নাম্বারে দিতে বলে। মুক্তিপনের টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দিবে বলে জানায়।

কিন্তু রানার বাবা পুটু মিয়া অপরহরণকারীদের বলেন, এতটাকা কিভাবে দিব এবং এত রাতে বিকাশের দোকানও বন্ধ। তখন রানার ফোন থেকে বার বার ফোন দিয়ে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং রানাকে মারপিটসহ প্রাণে মেরে ফেলাল হুমকি দেয় অপহরণকারীরা।

তখন নিরুপায় হয়ে রানার বাবা পুটু মিয়া মোল্লা বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানায় হাজির হয়ে মৌখিকভাবে ঘটনাটি জানান। পরে বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর দিকনির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটি ওই রাতেই মাঠে নামে। একর্যায়ে রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ ওই অপহরণকারী চক্রের ২ সদস্যকে আটক করে। পরবর্তীতে আটককৃত আসামীদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক ডিবি পুলিশের একটি টিম সারারাত ব্যাপী বগুড়া সদর ও শাজাহানপুর থানা এলাকায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতাসহ ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত এক নারীসহ মোট ৬জনকে গ্রেফতার করে। এরপর অপহৃত দুই বন্ধুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার এবং মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশ।

বগুড়া ডিবির ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা জানায় যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের মেয়ে সদস্যদের দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের সাথে বিভিন্নভাবে সখ্যতা গড়ে তুলতো। তারপর কৌশলে তাদের মেয়ে সদস্যদের দিয়ে বিভিন্ন মানুষকে টার্গেক করে দেখা করার কথা বলে তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে ডেকে নিয়ে গিয়ে অপহরণের পর মুক্তিপন আদায় করে করে আসছিল।

এই ধারাবাহিকতায় ২ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের মেয়ে সদস্য দ্বারা কৌশলে রানা ও শরিফুলকে বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানাধীন শাকপালা বাসষ্ট্যান্ড মোড়ে পৌঁছামাত্রই অপহরণকারীরা মোটরসাইকেল সহ সিএনজি যোগে অপহরণ করে। এরপর বগুড়া সদর থানাধীন পুরান বগুড়া হিন্দুপাড়া গ্রামের একটি ফাঁকা জায়গায় রশি দিয়ে হাত পা বেধে রেখে নির্যাতন করে এবং মুক্তিপনের জন্য ২ লাখ টাকা দাবি করে।

ডিবির ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীরা অপহরন, চাঁদাবাজ ও মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। আসামীদের মধ্যে কোরবান আলীর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, চাঁদাবাজি ও মাদক মামলাসহ মোট ৭টি মামলা রয়েছে।