ধুনট ইউএনও’র অফিস সহকারীর হাতে লাঞ্ছিত বিএডিসি কর্মকর্তা
ইনসেটে -ধুনট ইউএনও অফিসের সহকারী আব্দুর রহিম

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ঘুষ বাণিজ্যে দুই বছর ধরে ঝুলে রয়েছে প্রায় ৪০০ কৃষকের সেচ পাম্পের লাইসেন্সের আবেদন। বছরের পর বছর ঘরেও সেচ পাম্পের লাইসেন্স না পাওয়ায় জমি চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

এদিকে সেচ পাম্পের আবেদনের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে গত রবিবার বিকালে ধুনট ইউএনও অফিসের সহকারী আব্দুর রহিমের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন আল জুবায়ের আসিফ নামের এক সরকারি কর্মকর্তা।

ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের গোয়ালভাগ গ্রামের গোলজার হোসেনের ছেলে আল জুবায়ের আসিফ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর গাইবান্ধা জেলায় কর্মরত রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ছুটি নিয়ে ধুনটে এসে তার চাচা মথুরাপুর মুলতানী পারভীন শাহজাহান তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফসার আলীর নামে সেচ পাম্পের লাইসেন্সের খোঁজ নিতে রবিবার সকাল ১০ টার দিকে তার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ধুনট ইউএনও অফিসে যান।

কিন্ত ইউএনও না থাকায় তার অফিস সহকারীর কক্ষে গিয়ে তিনি তার চাচার সেচের আবেদন বিষয়ে জানতে চান। এসময় হঠাৎ করেই ওই কর্মকর্তার সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথাবার্তা ও উদ্ভট আচরন করতে থাকেন ধুনট ইউএনও’র অফিস সহকারী আব্দুর রহিম।

এদিকে ইউএনও’র অফিস সহকারী রহিমের অশালীন ব্যবহারের ভিডিও ধারণ করতে গেলেই ওই কর্মকর্তার মোবাইলফোন কেড়ে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এসময় সরকারি ওই কর্মকর্তাকে আব্দুর রহিম উচ্চ স্বরে বলেন, “আমি হ্যা বললে ইউএনও হ্যা বলবে” সে না বললে সেও না বলবে’’। এছাড়া রহিম দাম্ভিকতার সঙ্গে আরো বলেন, ওই রকম ডকুমেন্ট আরো পড়ে রয়েছে। ‘আমি ইউএনকে দিলে ইউএনও পাবে, তাছাড়া ফাইলের নিচেই পড়ে থাকবে’। এরপর বিএডিসি ওই কর্মকর্তা ও তার বাবাকে অফিস থেকে বের করে দেন রহিম।

এবিষয়ে ধুনটের বাসিন্দা গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি উপজেলায় কর্মরত বিএডিসি কর্মকর্তা আল জুবায়ের আসিফ বলেন, আমাদের একটি বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প রয়েছে। পাম্পটির ট্রান্সফরমার খুলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু লাইসেন্স ছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ট্রান্সফরমার উঠিয়ে দেয়নি। তাই চলমান ইরি মৌসুমে সেচ পাম্পের দরকার হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ধুনট উপজেলা সেচ কমিটিতে আবেদন করা হলেও দীর্ঘদিন ঘোরাঘুরির পরও কোন লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বললে তিনি ডকুমেন্টসহ দেখা করতে বলেন। তাই বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ইউএনও অফিসে গেলে অফিস সহকারী আব্দুর রহিম অশালীন ভাষায় কথাবার্তা বলার একপর্যায়ে আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তাই এঘটনায় এবিষয়ে সোমবার ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

বিএডিসি কর্মকর্তা আল জুবায়ের আসিফ আরো বলেন, চলমান মৌসুমের আগে উপজেলা সেচ কমিটি কোন প্রকার সভা করেনি। তাই এইসব আবেদন অমীমাংসিত ভাবে থেকে যায়। চলতি মৌসুমে খরা প্রবণতা বেশি থাকায় শতাধিক হেক্টর জমিতে পানি সেচ দেওয়া নিয়ে বিপাকে রয়েছেন কৃষকেরা। ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০১৯ অনুযায়ী আবেদন দাখিলের ১৫ কর্মদিবসের মধ্যৈ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল এবং ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর আবেদনটি মীমাংসা করতে হবে। কিন্তু উপজেলা সেচ কমিটি সেটি করেনি। এদিকে ধুনট ইউএনও অফিসের সহকারীর হাতে প্রথম শ্রেণীর এক কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠে।

তবে সরকারি ওই কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি অস্বীকার ধুনট ইউএনও অফিসের সহকারী আব্দুর রহিম বলেন, শুধু কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে শুধু এক প্রধান শিক্ষকের সেচ আবেদনই নয়, তার মতো প্রায় ৪০০ জনের সেচ লাইসেন্সের আবেদনই ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে।

গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গুয়াডহুরি গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন, ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর সেচ পাম্পের লাইসেন্সের জন্য আবেদন আবেদন করেছিল। কিন্তু এখনও কোন লাইসেন্স পাইনি। তবে শুনেছি, রহিমকে যারা টাকা দিয়েছে, তারেক অনেক লাইসেন্সই গোপনে পাস হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ঘুরেও কোন লাইসেন্স পাইনি। এতে জমিতে পানি সেচ দেওয়া নিয়ে অনেক বিপদে রয়েছি।

এবিষয়ে ধুনট-শেরপুর-নন্দীগ্রাম উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএডিসি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন পাশা জানান, তৎকালীন ইউএনওর সময় গত ফেব্রুয়ারী মাসে সেচ কমিটির মিটিং হয়েছিল। এতে ২৩২ জনের আবেদন বৈধ এবং ৮৫ জনের আবেদন অবৈধ ঘোষণা করে উপজেলা সেচ কমিটির কাছে জমা দেয়া হয়। কিন্তু ইউএনও’র বদলী হয়ে যাওয়ায় তা আর পাস হয়নি। তবে নতুন ইউএনও’র সময় তার ব্যস্ততার কারনে আর মিটিং করা সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে ধুনট উপজেলার তৎকালীন ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত জানান, গত ফেব্রুয়ারী মাসে প্রায় ২৫০ জনের সেচ আবেদনের সুপারিশ করে বিএডিসি। কিন্তু অতিরিক্ত আবেদনগুলো তদন্তের জন্য আরেক গ্রুপকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।

এবিষয়ে ধুনট উপজেলার বর্তমান ইউএনও জামে আলম বলেন, আমার অফিসে একজন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর অভিযুক্ত অফিস সহায়ক আব্দুর রহিমকে সোমবার রাতে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে। এছাড়া সেচ পাম্পের লাইসেন্স বিষয়ে একাধিকবার বিএডিসিকে তলব করলেও তারা মিটিংএ আসেনি। এবিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।