ধুনটে নদী খনন প্রকল্পের বালু হরিলুট, ভেস্তে যাচ্ছে সরকারি প্রকল্প

ইমরান হোসেন ইমন, অনুসন্ধানবার্তা:
বগুড়ার ধুনট উপজেলার বিভিন্ন নদীতে খনন করা বালু এখন হরিলুট চলছে। অবৈধভাবে এসব বালু বিক্রি করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীরা। এদিকে নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করায় নদীতে যেমন ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, তেমনি নদীর নাব্যতা ও নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে সরকারের প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে নদী খনন ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের সুফলও এখন ভেস্তে যেতে বসেছে।

জানাগেছে, সরকার ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার বাঙালী ও ইছমতি নদী খননের কাজ শুরু করে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়ম অনুযায়ি এক্সেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে নদী খনন করে দুপাশে তীর বেধে দেয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারের লোকজন কাজ শেষ করে চলে গেলে সেই বালু স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বিক্রি করে আসছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হেউটনগর গ্রামের গফুরের খেয়াঘাট এলাকার কান্তনগর মৌজার বাঙালি নদীর তীর থেকে বালু নিয়ে ট্রাকযোগে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানান, পাশ^বর্তী শাজাহানপুর উপজেলার শৈলধূড়ী গ্রামের কিছু সন্ত্রাসী ব্যক্তি ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হেউটনগর গ্রামের গফুরের খেয়াঘাট এলাকার জমির মালিকদের হুমকি দিয়ে বাঙালী নদী খননের তুলে রাখা বালু অবৈধভাবে বিক্রি করছে।

ধুনট উপজেলার কান্তনগর গ্রামের জমির মালিক চাঁন মিয়া ও মোকলেছুর রহমানসহ স্থানীয় লোকজন জানান, শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের শৈলধূড়ী গ্রামের আনছার আলীর ছেলে খয়রাত আলী মিস্টার (৪২), আকরাম আলীর ছেলে মন্তেজার রহমান (৩৮), আখের আলীর ছেলে মিঠুল আহমেদ (৩৮) সহ প্রায় ১০/১২ জনের একটি দল প্রতিরাতে ট্রাক লাগিয়ে নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে বালু নিয়ে বিক্রি করে আসছে। স্থানীয়রা বলেন, আমাদের বাপ-দাদার রেকর্ডকৃত সম্পত্তির মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ধুনটের বাঙালি নদী। নদীর পার্শ্ববর্তী জমিতে আমরা দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন ফসল লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। এমতাবস্থায় দু’মাস হলো আমাদের সম্পত্তি নষ্ট করে অবৈধভাবে জোরপূর্বক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করছে। তবে নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করায় নদীতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে বাধা দিলে তারা আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। তাই তারা নিরুপায় হয়ে নদী ভাঙ্গনরোধে বালু বিক্রয় বন্ধ করতে এবং ফসল উৎপাদনে সহযোগিতার দাবিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তবে অবৈধভাবে বালু বিক্রয় বিষয়ে জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলার শৈলধূড়ী গ্রামের আনছার আলীর ছেলে খয়রাত আলী মিস্টার দাম্ভিকতার সঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার নাম কিন্তু খয়রাত আলী মিস্টার? আমি কাউকে হিসাব করি না। ‘এমন কোন ম্যান নাই, আমার উপরে কথা বলে?’।

তবে শুধু ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হেউটনগর গ্রামেই নয়, একইভাবে এই উপজেলার চৌকিবাড়ী, দিলকান্দি, গোপালনগর, বিলকাজুলী, পেঁচিবাড়ী, নিমগাছী, বেড়েরবাড়ি, ধুনট সদর, চিকাশীসহ এসব এলাকার বাঙালী ও ইছামতি নদীর শতাধিক পয়েন্ট থেকেই নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বালু বিক্রি করা হচ্ছে অবৈধভাবে। এদিকে নদীর নাব্যতা ফেরাতে সরকারিভাবে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে যে নদী খনন প্রকল্পের কাজ করা হয়েছিল, তার সুফল এখনই ভেস্তে যেতে বসেছে।

এবিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন বা নদী খননের বালু অবৈধভাবে বিক্রি করায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মামলা, মালামাল জব্দ, এবং আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও এসব লোকজন আবারো একইভাবে কাজ করে আসছে। তাই এধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।