আম-ছালা দুটোই হারাচ্ছে বিএনপি

জেমস আব্দুর রহিম রানা: অনুসন্ধানবার্তা:
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিএনপি এই নির্বাচন তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপি বলেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। এই তফসিল নির্বাচন কমিশন এবং আওয়ামী লীগের আঁতাত বলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি দাবি করেছেন। ফলে বিএনপি যে আপাতত বর্তমান তফসিলে নির্বাচনে যাচ্ছে না— এটা মোটামুটি নিশ্চিত। নাটকীয় কোনো পরিবর্তন যদি না করে বা বিএনপির মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় যদি না হয়, তাহলে বিএনপি ২০১৪ এর মতো করেই নির্বাচন বর্জনের পথে হাঁটবে।

বিএনপি মনে করেছিল যে, বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জন করে তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপির প্রতি সহানুভূতি দেখাবে। সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে এবং শেষ পর্যন্ত সরকার নির্বাচন করতে পারবে না। এরকম একটি আকাঙ্খার জায়গা থেকেই বিএনপি এক দফা আন্দোলনে অনড় অবস্থানে ছিল। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যেভাবে আগ্রাসী ভূমিকা অবতীর্ণ হয়েছিল, যেভাবে সোচ্চার ছিল তাতে অনেকেই মনে করেছিল যে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা মেনে নেবে না। সরকারের ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা বা বিধি নিষেধ আরোপ করবে। কিন্তু বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে ভিন্ন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে কোন নেতিবাচক মনোভাব দেখাননি। বরং মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস আজ কলম্বো সফরে গেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সর্বশেষ শর্তহীন সংলাপের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে সংলাপের সুযোগ শেষ হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। দেশ এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। কাজেই সংলাপ বা অন্য কোনো উপায় গ্রহণ করতে গেলে সেটি নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমেই করতে হবে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটিও বলা হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন যখন বিএনপিকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, তখন বিএনপি সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করল কেন? এরকম অবস্থায় যারা বিএনপির পালে বাতাস তুলেছিল এবং যারা বিএনপিকে নির্বাচনে না থাকার প্রশ্নে অনড় অবস্থান নিতে পরামর্শ দিয়েছিল, তারা এখন হাত পা গুটিয়ে বসে আছেন। ফলে বিএনপি আম-ছালা দুই হারাতে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না যায় তাহলে নির্বাচন প্রতিরোধ করা বিএনপির পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ এখন বিএনপি যে হরতাল, অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচিগুলো দিচ্ছে সেই কর্মসূচিগুলো মোটেও জনগণ গ্রহণ করছে না এবং জনসম্পৃক্ততা পাচ্ছে না। ফলে এই ধরনের পানসে কর্মসূচি দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো যাবে—এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। বিএনপি নেতারাও তা বিশ্বাস করে না।

বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত তাহলে যে কটি আসন পেত তাহলে তাদের সংসদে একটি অবস্থান থাকত এবং সংসদে তারা কথা বলতে পারত। এমনকি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিয়ে তারা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে না—এমন অভিযোগ আনতে পারত। সরকারকে চাপে ফেলতে পারত। কিন্তু তা না করে সরাসরি নির্বাচন প্রত্যাখানের ঘোষণা বিএনপির জন্যই বুমেরাং হয়েছে। আবার বিএনপি যেমনটি মনে করেছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন দেবে। সেই সমর্থন যদি বিএনপি না পায় তাহলে আন্দোলন দিয়ে নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। ফলে সংসদেও থাকা হবে না, নির্বাচনও ঠেকাতে পারবে না। বিএনপি একটি পরিত্যক্ত রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। আর এই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তের ফলে বিএনপি আম-ছালা দুই হারাল বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে বিভিন্ন মহল মনে করেন, এখনও সময় আছে বিএনপির মধ্যে যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয় আর তারা যদি নির্বাচনে আসে তাহলে এ যাত্রায় তারা দলটিকে রক্ষা করতে পারবে হয়ত।