সাজু মিয়া, শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি :
সারাদেশে চলছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আমেজ। তারই হাওয়া লেগেছে যেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে। সাংস্কৃতিক রাজধানী মহাস্থানগড়, ঐতিহাসিক ভাসুবিহার, নরপতির ধাপ ও বাংলাদেশের এক মাত্র মসলা গবেষণা কেন্দ্র এই উপজেলায় অবস্থিত।
আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হোটেল, রেস্তোরা, চায়ের দোকানগুলোতে বইছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়নের জন্য উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নেতাদের কাছে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অনেক প্রার্থীই মনে করছেন নৌকা প্রতীক পেলে নির্বাচনে জয়ী হওয়া সম্ভব। শিবগঞ্জ বিএনপি’র দূর্গ বলে পরিচিত। তবুও নৌকার মনোনয়ন চান ১২ ইউনিয়নে প্রায় ৪৭ জন প্রার্থী। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা জানান, নৌকা পেলে নির্বাচন করবেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে নির্বাচন করবেন না।
শিবগঞ্জ উপজেলার ১নং ময়দানহাট্টা ইউনিয়ন :
ময়দানহাট্টা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নৌকা মার্কার প্রার্থী হতে চান ৯ জন। তারা হলেন, বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান এস এম রুপম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মেজবাউল আলম, সাধারণ সম্পাদক আপেল আহমেদ মেহেদুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ওসমান আলী, সাবেক ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর, ইউপি সদস্য শাহিদুল ইসলাম নান্নু, শাহানা খাতুন, আওয়ামী লীগ নেতা আঃ ছামাদ তোতা ও জিহাদ সরদার। এদের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম রুপমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর হত্যা মামলায় এখনো হাজতে রয়েছেন তিনি।
২নং কিচক ইউনিয়ন :
কিচক ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান ৩ জন প্রার্থী। তারা হলেন- বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান এবিএম নাজমুল কাদির শাহজাহান চৌধুরী, বর্তমান ইউপি সদস্য শাহজাহান আলী সাজু, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন। এছাড়াও শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম মনোনয়নের জন্য দৌড়-ঝাপ করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
৩নং আটমুল ইউনিয়ন :
আটমুল ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চায় ৫ জন প্রার্থী। তারা হলেন বর্তমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বেলাল হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম গোলাম সরওয়ার মান্নার ছেলে তরুণ সমাজসেবক গোলাম সাকলায়েন রাব্বী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান রঞ্জু এছাড়াও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জাফরুল ও রেফাজ উদ্দীন মনোনয়ন চান। তাদের মধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বেলাল হোসেন বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন এবং ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন।
৪নং পিরব ইউনিয়ন :
পিরব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয় চান ৩ জন প্রার্থী। তারা হলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের সদস্য আঃ করিম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শহীদুল ইসলাম ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মকবুল হোসেন।
৫নং মাঝিহট্ট ইউনিয়ন :
মাঝিহট্ট ইউনিয়ন থেকে নৌকার কান্ডারী হতে চায় ৪ জন প্রার্থী। তারা হলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল গফুর মন্ডল, সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শাহ কামাল তালুকদার,তরুণ নেতা তরিকুল ইসলাম ও সাবেক ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি এম শামছুল হক।
৬নং বুড়িগঞ্জ ইউনিয়ন :
বুড়িগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চায় ৪ জন প্রার্থী। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম চঞ্চল, সদস্য শামছুত তায়ালা খুররম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আঃ মতিন ও আ.লীগ নেতা সাইদুর রহমান।
৭ নং বিহার ইউনিয়ন :
বিহার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি হতে চায় ৪ জন প্রার্থী। তারা হলেন- বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মহিদুল ইসলাম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোনায়েম হোসেন ইকবাল, ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক মতিউর রহমান মতিন ও ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম।
৮নং শিবগঞ্জ ইউনিয়ন :
শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়ন থেকে নৌকার কান্ডারী হতে চায় ৩ জন প্রার্থী। তারা হলেন তরুণ সমাজসেবক, মোঃ রাকিব আকন্দ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ- সভাপতি শহীদ উদ্দীন শহীদ, ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাফিউল সরকার সাফি।
৯নং দেউলী ইউনিয়ন :
দেউলী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হতে চায় ৩ জন প্রার্থী। তারা হলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ মোঃ মনেয়ারুল ইসলাম শাহীন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন টুটুল।
১০নং সৈয়দপুর ইউনিয়ন :
সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কে হবে নৌকার মাঝি তেমন কোনো প্রার্থীর প্রচার প্রচারণা নেই তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জুয়েল মনোনয়ন চান বলে জানা গেছে।
১১নং মোকামতলা ইউনিয়ন :
মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা নিয়ে লড়তে চান ৩ জন প্রার্থী। তারা হলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম রেজা রাজা চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবলীগের সভাপতি আহসান হাবীব সবুজ ও ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান আপেল।
১২নং রায়নগর ইউনিয়ন :
রায়নগর ইউনিয়ন পরিষদ, এমন একটি ইউনিয়ন, যেখানে ভোট কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর এজেন্টও থাকতে দেওয়া হয় না। তবে গত ইউনিয়ন পরিষদ উপ-নির্বাচনে কিছুটা হলেও আওয়ামী লীগের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। এ ইউনিয়ন থেকে নৌকার মনোনয়ন চান ৫ জন প্রার্থী। তারা হলেন- গত উপ-নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজুল ইসলাম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান কাজী,সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মটু, আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন বাচ্চা মিয়া ও নজরুল ইসলাম।
তবে কেমন প্রার্থী পাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আজিজুল হক বলেন, দলের জন্য নিবেদিত, ত্যাগী, তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক কোনো হাইব্রীড, অনুপ্রবেশকারী, সুবিধাবাদী এবং নৌকার বিরোধিতাকারী ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
