‘ভিক্ষা করে বেড়াতাম, রাস্তা থেকে তুলে এনে প্রধানমন্ত্রী আমারে ঘর দিছে’

জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর : অনুসন্ধানবার্তা
‘রাস্তায় রাস্তায় আমি ভিক্ষা করে বেড়াতাম, রাস্তা থেকে তুলে এনে প্রধানমন্ত্রী আমারে ঘর দিছে। আমি এখন সুখে শান্তিতে আছি।’ একথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে আসা ভিক্ষুক হযরত আলী। শুধু হযরত আলীই নয়, এধরনের আবেগ অনভুতি প্রকাশ করেছেন উপকারভোগী অনেকেই।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যশোরের শার্শা উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্পের প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগী রয়েছেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৯ জন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে অসহায় মানুষগুলো এসব সুবিধা পেয়েছেন। এ উপলক্ষে বুধবার বিকেলে উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে উপস্থিত সুবিধাভোগীদের অনেকেই আনন্দ অশ্রুর সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। প্রকাশ করেন মনের মাঝে লুকিয়ে রাখা আবেগ।

পরে উলাশী বাজার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা হযরত আলী শার্শার সংসদ সদস্য আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। মানুষের কাছে ভিক্ষা করে সংসার চলতো। জায়গাজমি ও ঘরবাড়ি না থাকায় বেনাপোল গাজীপুর এলাকার মৃত মিনহাজ আলীর বাড়ি মা ও স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ শতক জমি ও ২ রুমের ঘর করে দিয়েছেন। এতে তিনি ব্যাপক খুশি। কারণ হিসেবে তিনি জানান, কখনো তার সামর্থ্য ছিলোনা জমি কিনে দালানঘর করার। প্রধানমন্ত্রীর ঘরে মা ও স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন। হযরত আলী জানান, প্রধানমন্ত্রীর সহায়তার কারণে এখন আর তাকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হয়না। তিনি সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী তাকে একটি দোকানঘর ও ব্যবসার পূঁজি দিয়েছেন। আপনাকে হাজারো সালাম ও ধন্যবাদ।

বাগআঁচড়ার স্বামীহারা তাহারন বেগম জানান, হঠাৎ করে তার দুটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। ছেলে সন্তান না থাকায় চোখ অপারেশনের জন্য টাকা চেয়েছিলেন দুই মেয়ের কাছে। সামর্থ্য না থাকায় মেয়েরা টাকা দেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে তিনি চোখ অপারেশন করাতে সক্ষম হন। তিনি এখন চোখে দেখতে পান। বিনামূল্যের চিকিৎসাসেবা মানুষের দ্বোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তাহারন বেগম।

জামতলার সামটা গ্রামের জোহর আলীর ছেলে মিলন কবির জানান, গরিব ঘরে জন্ম তার। তারপরও বেকারত্বের অভিশাপ। দুশ্চিন্তায় পার হচ্ছিলো প্রতিটি দিন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে তিন মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। এরপর মায়ের দেয়া ২৫ হাজার টাকায় কেনা একটি গরু লালন-পালন করেন। এরপর যুব উন্নয়ন থেকে দুই দফায় দেড় লাখ টাকা ঋণ নেন। মিলন কবির জানান, এখন তার গোয়ালঘরে ৭ টি গরু রয়েছে। বর্তমানে তিনি ১৫ লক্ষাধিক টাকার মালিক হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মহান আল্লাহ আপনাকে যেনো সুস্থ রাখেন ভালো রাখেন। আপনি ফের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে অসহায় মানুষের খেদমত করার সুযোগ পান।

শার্শা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহিয়া তাবাচ্ছুম প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে জানায়, প্রাথমিক শিক্ষার অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন ভবন নির্মাণ করেছেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ পরিবেশে পাঠ গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আপনার কারণে বছরের শুরুতেই আমরা বই হাতে পাচ্ছি। ১৫০ টাকা হারে শিশু শিক্ষাথীদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন। এর আগে কোনো সরকার এমনটা করিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার সরকার মানেই শিক্ষাবান্ধব সরকার।

প্রতিবন্ধী আবু বক্কার সিদ্দিকী জানান, প্রধানমন্ত্রী আপনি একজন মমতাময়ী মা। আপনার মতো করে কেউ অসহায় মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসেননি। আপনার কারণে নিয়মিত ভাতার টাকা পাচ্ছি। আপনাকে ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। দোয়া করি আল্লাহ আপনার প্রতি সহায় হোন।

মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন , মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ সুবিধায় আপনি বিপ্লব ঘটিয়েছেন। আপনার কারণে মুক্তিযোদ্ধা সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাচ্ছেন। ভাতার টাকা বাড়িয়েছেন। ২০ হাজার করে ভাতার টাকা পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা মহাখুশি।

প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শার্শা আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন। সভাপতিত্ব করেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র পাল।