ফুলের ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি চাষিরা

জেমস আব্দুর রহিম রানা: অনুসন্ধানবার্তা
শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস ঘিরে জমে উঠেছে গদখালীর ফুলের বাজার। প্রায় দুই বছর পর মুখে হাসি ফুটেছে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালীর চাষিদের।

মৌসুমের শুরুতেই ফুলের আশানুরূপ দাম পেয়ে খুশি ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালীর চাষিরা। এক সপ্তাহ ধরে ধাপে ধাপে ফুলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়েছে গোলাপ, গ্লাডিউলাস, জারবেরাসহ বিভিন্ন ফুল। ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, মূল্য চড়া হলেও চাহিদা থাকায় তারাও ভাল ব্যবসা করছেন। স্থানীয় ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে মৌসুমের সামনের দিনগুলোতে প্রত্যাশিত ফুল বিক্রি করে তারা বেশ লাভবান হবেন।

দেশে ফুলের উৎপাদনের মূল অঞ্চল যশোরের গদখালীসহ আশপাশের এলাকা। মূলত ডিসেম্বর মাসের বিজয় দিবস থেকে এখানকার ফুলের মৌসুম শুরু হয়। এসব কারণে গত কয়েক মাস ধরে কৃষকদের পরিশ্রমে যশোরের গদখালীর মাঠে মাঠে ফুটেছে গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিউলাস, রজনীগন্ধা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল।

বিজয় দিবসকে সামনে রেখে মৌসুমের প্রথম বাজারে ফুলের ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে গদখালীর বাজারে গিয়ে দেখা যায় গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৮ থেকে ১২ টাকা, গ্লাডিউলাস রঙ ভেদে ১২ থেকে ২৮ টাকা, জারবেরা ১০ থেকে ১৬ টাকা, রজনীগন্ধা ৫টাকা, একশ’ পিস চন্দ্রমল্লিকা ৫শ’ টাকা, এক হাজার হলুদ গাঁদা ৮শ’ ও বাসন্তি কালারের গাঁদা ফুল ১২শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষিদের দাবি হরতাল অবরোধে সমস্যা না হলে আসন্ন বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষের বাজার নিয়ে আশাবাদী তারা।

গদখালীর প্রসিদ্ধ ফুল চাষি শাহাজাহান আলী বলেন, করোনা, আম্পানসহ নানা কারণে গত কয়েক বছর ধরে ফুলের উৎপাদন ও দাম নিয়ে হতাশায় দিন কাটিয়েছেন। মাঝে মধ্যে লাভ হলেও তা প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। এবছরও আমরা ভালো লাভের আশা করছিলাম। কিন্তু ফুল উৎপাদনের উপযুক্ত সময়ে এসে হরতাল-অবরোধের কারণে বেচাকেনা কমে যায়। তবে শেষমেষ বিজয় দিবসের বাজারে এসে ফুলের ভালো দাম পেয়ে বেশ খুশি আমরা।

একই কথা বলেন ইসমাইল হোসেন নামে আরেক ফুল চাষি। তিনি বলেন, সার-কীটনাশক, সেচ, শ্রম খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই ফুল চাষ খুব দূরুহ হয়ে পড়েছে। তারপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক সংকটের কারণে আমাদের শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। তবে আশা জাগিয়েছে বছরের প্রথম ফুলের বাজার পেয়ে। আশা করছি সহসায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হয়ে ফুলের বাজার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
ঢাকার সাভার থেকে আসা পাইকার ব্যবসায়ী তরফদার আবুল খায়ের বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বেশি চাহিদা গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিউলাস ও গাদাফুলের। এই চারটি ফুলের চাহিদা থাকায় এই বাজার থেকে আমরা ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছি। তবে গত দুই দিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার ফুলের দাম বেশি বলে জানান তিনি।

যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, এবছর মৌসুমের প্রথম বাজারে ফুলের দাম চড়া হওয়ায় বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা অনেকটা অনিশ্চয়তায় ছিলাম বিজয় দিবসকে সামনে রেখে ভালো দাম পাবো কি-না। কিন্তু সব শঙ্কা কেটে মৌসুমের প্রথম বাজারে ফুলের ভালো দাম পাচ্ছেন যশোরের গদখালীর ফুল চাষিরা। চাহিদা থাকায় আসন্ন বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ, পহেলা ফালগুনেও বাজার নিয়ে আশাবাদী । তিনি বলেন, এভাবে দাম পেলে এ বছর লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হাসান পলাশ বলেন, যশোরে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ১১ ধরনের ফুলের চাষ হয়েছে। এবছর ফুল চাষের জন্য আবহাওয়া ভালো হওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে।