যশোরে প্রকৌশলী হত্যায় মুল্লুক-সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে মামলা

জেমস আব্দুর রহিম রানা: অনুসন্ধানবার্তা:
যশোরে প্রকৌশলী বায়োজিদ হত্যার ঘটনায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হোতা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে মুল্লুক চাঁদ ও তার সহোদর রকিবুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে সঞ্জয় চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫/৬ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তবে প্রধান ২ আসামির সেকেন্ড ইন কমান্ড ও টর্চার সেলের প্রধান নামে পরিচিত মহব্বত আলী মন্টুকে ৮নং আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মুল্লুক-সঞ্জয়ের উপস্থিতিতে মন্টু প্রকৌশলী বায়োজিদকে পিটিয়ে হত্যা করে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করার পরও নির্যাতন থেমে থাকেনি। লাশের ওপর কিল ঘুষি ও লাথিয়ে নৃশংসতার নজির সৃষ্টি করে টর্চার সেলের সদস্য শহরের গাড়িখানা রোডের শহিদুল ইসলাম, রাজু, রাজন, শাহ আলম, মণিরামপুরের লাউড়ি গ্রামের নুরুল হক দফাদারের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান এবং লোন অফিসপাড়ার সাদেক মোল্লার ছেলে জসিম মোল্লা।

এঘটনায় ২৫শে মার্চ রাতে মামলাটি করেন হত্যাকান্ডের শিকার প্রকৌশলী বায়োজিদের বৃদ্ধ মা দিলরুবা বেগম। মামলা নং- ৯৫। এঘটনায় মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এদিকে, চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস এ হত্যাকান্ডের পর মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছে। সবজি বাজারের অনেকেই নিশ্চিত করে বলেছেন এরআগেও মুল্লুক চাঁদ এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হত্যা করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করেন। পরে নিহতের পরিবারকে একটি রিকশা কিনে দিয়ে পার পেয়ে যান। তার ভাই সঞ্জয় চৌধুরী একজন মুখোশধারী ক্রিমিনাল। দুই ভাই মিলে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপাকে ফেলতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেন। এরফলে যশোরে বাজার দর সবসময় উর্দ্ধগতি থাকে। মুল্লুক চাঁদ ও তার আরেক ভাই কুখ্যাত সন্ত্রাসী রিপন চৌধুরীর বিরুদ্ধে খুন, গুম, হত্যা, মুক্তিপণ আদায়, নদীর জমি দখল করে আড়ৎ নির্মাণ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকের ওপর জবরদস্তি চালিয়ে ভিটে বাড়ি লিখে নেয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। যশোর কোতয়ালিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে একাধিক মামলা। তবে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এসব অভিযোগ ও মামলা নিয়ে তাদের খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। আইনের মার-প্যঁচে তারা বহালতবিয়তে খুনের মতো ঘটনা ঘটিয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, ২৪ শে মার্চ বিকালে খুলনা থেকে প্রকৌশলী বায়োজিদকে একটি গাড়িতে উঠিয়ে যশোরে আনে সঞ্জয় চৌধুরীসহ তাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড ও টর্চার সেলের প্রধান মহব্বত আলী মন্টু ও মণিরামপুরের মোস্তাফিজুর রহমানসহ ৪/৫ জন সন্ত্রাসী। তাদের অনৈতিক কাজ কারবারে রাজি না হওয়ায় বায়োজিদের বিরুদ্ধে অর্থআত্মসাতের অভিযোগ তোলে মুল্লুক-সঞ্জয়। নিহত বায়োজিদ তাদের চৌধুরী কনস্ট্রাকশন ঢাকা অফিসে কর্মরত ছিলেন। কখনো সাড়ে ৩ লাখ কখনো আবার সাড়ে ৫ লাখ টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত ২৪ শে মার্চ দিবাগত রাতে নিজেদের চালের আড়তে পিটিয়ে প্রাণ নিয়ে নেয় তারা। এই চালের আড়ৎ ছাড়াও তাদের বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে টর্চার সেল থাকার অভিযোগ রয়েছে। যে আড়তে বায়োজিদ নৃশংস হত্যার শিকার হন সেখানে বিশাল চালের মজুদ রয়েছে। এ গোডাউনের নাইট গার্ড সেই রাতে অবর্ণনীয় নির্যাতনের তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে স্বীকার করেছে।

নিহত বায়জিদের স্ত্রী তাকিয়া তুছ সাদিয়া বলেন, তার স্বামী বায়েজিদ মুল্লুক চাঁদ ও তার ভাই সঞ্জায়ের বসুন্ধরা এলাকার একটা প্রজেক্টে প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করতেন।

এবিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে নম্বর থেকে বায়েজিদের মাকে ফোন দেয়া হয় সেটি বিএনপি নেতা মুল্লুক চাঁদ ওরফে রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর। এ ঘটনায় মামলা রেকর্ডের পর অভিযুক্ত একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।